মহাজোটে আ.লীগের কয়েস ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কে?

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন এই আসনের বর্তমান সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তবে তাঁর বিপরীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখানে বিএনপির প্রাথমিকভাবে মনোনীত চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ অবস্থায় দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা চূড়ান্ত প্রার্থী কে হবেন—তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন। তবে একক প্রার্থী মনোনীত করায় আওয়ামী লীগ অনেকটা সুসংহত অবস্থায় রয়েছে।
দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির পাঁচজন নেতা জানান, বিএনপি নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থীকে মনোনীত করেছে। কিন্তু এটি মোটেই ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ, ৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন মূলত দলের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম জানা যাবে। ফলে প্রচার-প্রচারণা শুরু করতে দেরি হয়ে যাবে। যদি চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে যেত, তবে প্রচারণা কার্যক্রম আগে থেকেই শুরু করা যেত। এ অবস্থায় দলীয় প্রার্থীকে অনেকটা পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে।
গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে এই আসনে মোট ১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন মো. দিলওয়ার হোসাইন (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (স্বতন্ত্র), মো. আবদুস সালাম (বিএনপি), হাফিজ মাওলানা আতিকুর রহমান (বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), শফি আহমদ চৌধুরী (বিএনপি), এম এ মতিন বাদশা (ইসলামী আন্দোলন), এম এ হক (বিএনপি), আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী (বিএনপি), মো. আবদুল ওদুদ (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদ (জাতীয় পার্টি), মো. উছমান আলী (জাতীয় পার্টি) ও মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র)।
১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে এ আসন থেকে দুবার আওয়ামী লীগ, দুবার জাতীয় পার্টি ও একবার বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। দুবারের মধ্যে গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী নির্বাচিত হন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী ৯৭ হাজার ৫৯৩টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী।
এর আগে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরী সাংসদ নির্বাচিত হন। তখন তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এ মুকিত খান বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এ মুকিত খান বিজয়ী হয়েছিলেন এবং তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আতিকুর রহমান।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এই আসনে প্রথমে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমানকে মহাজোটের প্রার্থী করা হবে বলে প্রচার হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। এর ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে যাওয়ায় তিনি নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেকটাই গুছিয়ে নিয়ে এসেছেন। বিএনপির চারজন প্রার্থী থাকায় দলটির নেতা-কর্মীরা দ্বিধায় পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পাবেন, এটি নিশ্চিত না হয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা অনানুষ্ঠানিকভাবেও কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না।
তবে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শেষ পর্যন্ত এ আসনে বিএনপির শফি আহমদ চৌধুরীই নির্বাচন করবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর গত বুধবার শফি আহমদ চৌধুরীও একই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমিই এখানে সংসদ নির্বাচন করব। বিএনপির কৌশল হচ্ছে এক আসনে একাধিক প্রার্থী দেওয়া। শেষ পর্যন্ত অপর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। যেহেতু আমিই চূড়ান্ত প্রার্থী হব বলে কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে, তাই সব ধরনের আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিও আমি নিয়ে রাখছি। প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রচারণার কাজ শুরু হলে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করব।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে উন্নয়নকাজ করেছি। এলাকাবাসী এই কাজের মূল্যায়ন অবশ্যই করবেন।’