নারী প্রার্থী একজনই

চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের মনোনীত ও স্বতন্ত্র মিলে ১৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন রয়েছেন নারী প্রার্থী। যদিও জেলায় মোট ভোটার সংখ্যায় এগিয়ে নারীরা।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, দুটি আসনে মোট ভোটার ৮ লাখ ৫২ হাজার ৮১০। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৭২ ও নারী ভোটার ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৩৮। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটার বেশি ১ হাজার ৬৬৬ জন।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শিরিন নাঈম (পুনম) চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের জন্য দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি।
শিরিন বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে মনোনয়ন ফরম তুলেছিলাম। কিন্তু কেন্দ্র থেকেই নতুন কোনো নারীকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সকলে কথা বললেও আমরা বঞ্চিত।’ তিনি দাবি করেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ৩০০ আসনের মধ্যে ১০০ আসনে নারীদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে একজনকে মনোনয়নপত্র দিলেও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে দিয়েছেন চারজনকে। সবাই পুরুষ প্রার্থী। জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফুন নাহার বলেন, ‘চরম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। দলের পুরুষ নেতারা ক্ষমতা দিতে চান না। আমরা মাঠের নেতা-কর্মী হিসেবে নিজেদের সঁপে দিলেও বড় নেতারা নারীদের সেভাবে মূল্যায়ন করেন না।’
আওয়ামী লীগ বা বিএনপি থেকে নয়, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ থেকে জেলায় একজন মাত্র নারী প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁর নাম মেরিনা আক্তার। যদিও জেলায় দলটির সাংগঠনিক অবস্থান খুব একটা নেই।
মুসলিম লীগের সভাপতি নবাব আলী হাসান আসকারীর সহধর্মিণী মেরিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের অনেক রাজনৈতিক অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়তনে প্রধান দুই দলকেই এগিয়ে আসতে হবে। সংরক্ষিত আসনেই কেবল নারীরা সাংসদ হবেন, এই ধারণার পরিবর্তন করতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন এনজিওকর্মী নুঝাত পারভীন। তিনি বলেন, ‘নারীরা সংরক্ষিত সদস্য
বা ভাইস চেয়ারম্যান হলেও তাঁদের মূল্যায়ন করা হয় না। রাজনীতিতেও সিদ্ধান্ত, মতামত ও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের মূল্যায়ন নেই। কিন্তু নারীরা এখন অনেক সচেতন। তারা চায় সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মর্যাদা নিয়ে টিকে থাকতে।’
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মৌসুমী হোসেনের মতে, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে কাজ হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি মেনে নেওয়ার মতো মানসিকতা এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি।
মৌসুমী হোসেন বলেন, প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই নারী কর্মী আছেন। দল যদি সেভাবে সমর্থন না করে, সুযোগ না দেয়, দলের নেতারা যদি নারীদের প্রতি ভরসা করতে না পারেন, তাহলে সেটাও তো একটা দিক। সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য দলের সমর্থন, নিজের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। একজন নারী এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন, সুতরাং তাঁকে আমরা পেছনে না টেনে সমর্থন দিতে হবে।