স্বতন্ত্রেই অবিচল তাঁরা তিনজন

মুহিবুর রহমান, এনামুল হক সরদার, জাহাঙ্গীর হোসেন
মুহিবুর রহমান, এনামুল হক সরদার, জাহাঙ্গীর হোসেন

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনে এনামুল হক সরদার ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া এবং সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া মিলু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এই তিনজন কোনো দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তা নয়। শুরু থেকেই তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চেয়েছেন। তাঁরা কোনো দল থেকে মনোনয়ন চাননি।

মুহিবুর রহমান সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে সিলেট-২ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তিনি বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ১৯৮৫ সালে তিনি ওই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রথম সংসদ নির্বাচন করেন ১৯৯১ সালে। সেবার জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির মকসুদ ইবনে আজিজ লামার কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। এবার তিনি কোনো দল থেকে মনোনয়ন চাননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

একই আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক সরদার সিলেটের একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিত। সিলেট নগরের শাহজালাল সিটি কলেজ, শাহজালাল সিটি কারিগরি কলেজ এবং পাইওনিয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান তিনি। জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুবাদে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছিল। এনাম সরদার জানান, সেই পরিচিতি ও ‘স্বতন্ত্র’ ভাবমূর্তি নিয়ে তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

সিলেট-২ আসনটি এই অঞ্চলের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে বিবেচিত। এ আসনের সাবেক সাংসদ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে ‘নিখোঁজ’। আসন্ন নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে স্বামীর আসনে লড়ছেন। এখানে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আছেন জাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সাংসদ ইয়াহইয়া চৌধুরী। ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী হওয়ার তৎপরতায় মাঠে রয়েছেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসীর আলী।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এনাম সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন নয় যে, আমি শুধু ভোটের জন্য মাঠে নেমেছি। অতীতে এ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এবং বর্তমানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে দেখা হয়ে গেছে এলাকাবাসীর। এ জন্য আমার প্রতি একধরনের আস্থার কথা সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি।’

সিলেট-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ হওয়ার আগে তিনি বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুই শতাধিক গ্রামে ৩০০ উঠান বৈঠক করেছেন। এই আসনের বর্তমান সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও শিল্পোদ্যোক্তা ফয়সল আহমদ চৌধুরী, বিকল্পধারার প্রার্থী সমশের মবিন চৌধুরী এবং জামায়াতের হাবীবুর রহমান।

রাজনৈতিক প্রার্থিতার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কোন কৌশলে এগোচ্ছেন—জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি নির্বাচনী এলাকায় ৩০০টি উঠান বৈঠক করেছেন। এর পরপরই তিনি প্রার্থী হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। ‘তারুণ্য ও মেধার জয়/নতুন শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’—এই স্লোগান সামনে রেখে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করে চালাচ্ছেন প্রচারণা। এতে দলনিরপেক্ষ প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাশিত সাড়াও পাচ্ছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘আমি দলের নয়, জনগণের মনোনীত প্রার্থী হতে চাই। আমার প্রার্থিতায় দল আগে নয়, জনগণের বলে বলীয়ান পরিচয়টা মুখ্য। আমার এমন মতামত এলাকার জনগণ বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। এ জন্য আমি স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী।’