বিএনপি মনোনয়ন-বাণিজ্যে রেকর্ড করেছে : কাদের

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, ‘আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি, গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, বিএনপি মনোনয়ন–বাণিজ্যে এবার রেকর্ড করেছে। এই যে এত সব প্রার্থীর ঋণখেলাপির কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তারপর এখনো ৫৫৫ জন রয়েছেন। এটা কি মনোনয়ন বাণিজ্য নয়?’ 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের ২৭৮ জনের মনোনয়ন টিকেছে, আর বিএনপির টিকেছে ৫৫৫ জন। তাহলে মনোনয়ন কার বেশি টিকেছে? নির্বাচনে তো অংশগ্রহণ করবেন ৩০০ জন, এর মধ্যে ঐক্যফ্রন্টকে দিতে হবে না? প্রার্থী হবেন ৩০০ জন, এখানে ৫৫৫ জন কোথা থেকে এল?

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মনোনয়ন বাতিল করে সরকার পুতুল নাচের খেলার আয়োজন করছে, বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর এ বক্তব্যের জবাব ওবায়দুল কাদের বলেন, তাঁদের মনোনয়ন প্রক্রিয়াটাই একটি পুতুল নাচের খেলা। সরকার কেন করবে? নির্বাচন কমিশন কি সরকার? তিনি বলেন, যখন নির্বাচন কমিশন বিএনপির পক্ষে না থাকে, তখন তো নির্বাচন কমিশন সৎমা হয়ে যায়। এখন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে পাবরে, যদি বিএনপিকে গ্যারান্টি দিতে পারে যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করবে, তাহলে তাদের কাছে নিরপেক্ষ হবে নির্বাচন কমিশন।

বিএনপিকে নির্বাচনে থাকার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরোধ করার কারণ জানতে চাইলে মন্ত্রী কাদের বলেন, এই যে সারা বছর দেশে-বিদেশে নালিশ আর নালিশ, সরকার নির্বাচন করতে দেয়নি। সরকার কারসাজি করে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে, এই অপবাদ যাতে না ছড়াতে পারে, সে জন্য তাদের মাঠে থাকাটাই ভালো।

আগামী নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কেউ অংশগ্রহণ না করায় বিএনপির রাজনীতিতে জিয়া পরিবার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে কি না? সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার পাপে আমি আজকে ভিকটিম হচ্ছি, আমার অন্যায়ে আজকে আমি ভিকটিম হচ্ছি। এতে অন্যদের কী করার আছে? আপনি অপরাধ করেছেন, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, মামলা হয়েছে। ১০ বছর মামলাটাকে বিলম্বিত করা হয়েছে, রায় বিরুদ্ধে গেছে। হাতেনাতে প্রমাণ আছে, এটা আদালতের সিদ্ধান্ত। জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের নেই। আমরা কেন নিশ্চিহ্ন করতে যাব?’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে থাকলে কোনো ক্ষতি নেই। গণতন্ত্র দুই চাকার বাইসাইকেল। একদিকে সরকারি দল, অন্যদিকে বিরোধী দল। বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে তো সংসদীয় গণতন্ত্র হয় না। কাজেই এখানে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। জিয়া পরিবারই বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য সব ধরনের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করেছে।’

জাতীয় পার্টির মহাসচিবকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় মহাজোটের প্রার্থী মনোনয়নে কোনো টানাপোড়েন হবে কি না? জানতে চাইলে মন্ত্রী কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিবের বহিষ্কারের বিষয়টি তাদের ব্যাপার। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু বলার নেই। আর এ নিয়ে মহাজোটের যে ঐক্য প্রক্রিয়া, এখানে তার প্রভাব পড়বে না।

ইজতেমায় সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী কাদের বলেন, দেশে একটি অশান্তি অস্থিরতা সৃষ্টি তারা (বিএনপি) করতে চায়, কারণ তারা জেনে গেছে আগামী সংসদ নির্বাচনে তাদের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা নির্বাচন বানচালের জন্য দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশটাকে তারা (বিএনপি) বিঘ্নিত করতে চাইছে। নিজেরা কোনো আন্দোলন করতে পারেনি, অন্যদের ইস্যুতে নাক গলাচ্ছে, অন্যদের ইস্যুতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে কি না, সেই অপচেষ্টা তাদের আছে।

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পাবনায় দুজন নিহত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা সামাজিক ব্যাপারেও হতে পারে। নরসিংদীতে ৫০ বছর ধরে ঘটে আসা সামাজিক দ্বন্দ্বকে দলীয় হিসেবে অনেকে প্রচার করেছে। এখন পাবনার ঘটনা সে রকম কিছু হতে পারে। পাবনার ঘটনায় দলীয় সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে এ ধরনের ঘটনা হয়েছে, এমন কোনো রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।