রিটার্নিং কর্মকর্তারা সৎমায়ের ভূমিকায়

রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি
রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘সৎমায়ের ভূমিকা’ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সৎমায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন ।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রিজভী।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকে এনে বৈঠক করে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গণহারে বাতিল করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্রে অসংখ্য ত্রুটি থাকার পরেও সেগুলোকে বাতিল করা হয়নি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাছাইয়ে দলগত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীরাই বেশি বাদ পড়েছেন। বিএনপির ১৪১ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩ জনের। ইসি সূত্র জানায়, ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মোট ২ হাজার ৫৬৭ জন দলীয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৪০২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, যার ১৪১ জনই বিএনপির। ২৯৫টি আসনে বিএনপির ৬৯৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে ৫৫৫ জনের।

অন্যদিকে ২৬৪টি আসনে আওয়ামী লীগের ২৮১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বৈধ হয়েছে ২৭৮ জনের।

রিজভী বলেন, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার তথ্য গোপনের অভিযোগ থাকার পরও সরকারি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়নি।

বিএনপির নেতা রিজভী বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির বিধান হচ্ছে—প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তাঁদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। কোনো নথি উপস্থাপন করতে চাইলে তা করতে দিতে হবে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা যদি শুরুতেই প্রার্থীকে থামিয়ে দেন, তাহলে বুঝতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তা দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছেন। এভাবে সারা দেশেই রিটার্নিং কর্মকর্তারা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন।

রিজভী বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রিটার্নিং কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া চলবে না। কিন্তু যদি রিটার্নিং কর্মকর্তা বা নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত অন্য কোনো কর্মকর্তা কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেন, তাহলে তা হবে গুরুতর অসদাচরণ। এটি পুরো নির্বাচন কমিশনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

রিজভী বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডে নির্বাচনে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটকে কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত রিটার্নিং কর্মকর্তারা যা করছেন, তা কেবলই প্রহসন। আয় কমে গেলেও ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-নেতাদের সম্পদ বাড়ে, অথচ এগুলোতে দুদক ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আসন্ন সংসদ নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও দেশব্যাপী গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।