আয় বেড়েছে চার সাংসদের

>

চারজনের বার্ষিক আয় বেড়েছে কয়েক গুণ করে। সঙ্গে বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি।

.
.

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশালের ছয়টি আসনের চারজন বর্তমান সাংসদ এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই চার সাংসদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদ বিবরণী দেখে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে তাঁদের বার্ষিক আয় ও সম্পদ দুটোই বেড়েছে।

এবার বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে ৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২ ডিসেম্বর বাছাইয়ে নয়জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ছয়টি আসনের মধ্যে মধ্যে চারটিতেই বর্তমান সাংসদেরা এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ওই চার সাংসদ হলেন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা) আসনে আওয়ামী লীগের পঙ্কজ নাথ, বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ, মুলাদী) আসনে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী টিপু সুলতান এবং বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের সাংসদ জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসরিন জাহান রত্না।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ পেশায় ব্যবসায়ী। বর্তমানে কৃষি খাত, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আয় বছরে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালে তা ছিল ২৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আয় বেড়েছে প্রায় আট গুণ।

বর্তমানে তাঁর নিজের ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার টাকার এবং তাঁর স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ২৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ২০১৪ সালে স্বামী-স্ত্রী দুজনের ছিল ১ কোটি ৭২ হাজার টাকার সম্পদ। এবার জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁর স্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার। গতবার ছিল ১ কোটি ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা।

সাংসদ নাসরিন জাহানের পেশা ব্যবসা। এবার তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন ৫৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৫ টাকা। সে অনুযায়ী এই সাংসদের গত পাঁচ বছরে আয় বেড়েছে তিন গুণের বেশি।

২০১৪ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় এই সাংসদের নিজের ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার থাকার পাশাপাশি ১ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ৮০ টাকার অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছিলেন। ওই সময় তাঁর স্বামী ও জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছিলেন ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এবার হলফনামায় নাসরিন জাহান অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছেন ৩ কোটি ৪৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এবার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে তিন গুণের বেশি। আর তাঁর স্বামী রুহুলের নামে রয়েছে ৩৭ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৫৫২ টাকার অস্থাবর সম্পদ। পাঁচ বছরে তাঁর স্বামীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে দেড় গুণের বেশি।

সাংসদ নাসরিন এবার স্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছেন ১৬৫ শতক কৃষিজমি, ঢাকার পূর্বাচলে ৭ দশমিক ৫০ কাঠার একটি প্লট, বাকেরগঞ্জে বসতভিটা এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি ফ্ল্যাট। তাঁর স্বামীর নামে আছে ১৩২ দশমিক ৬৭ শতক অকৃষিজমি, গুলশানে ১২ দশমিক ৭ কাঠার একটি প্লট ও বাড়ি এবং বাকেরগঞ্জের বাড়ি। বর্তমানে তাঁর দেনা আছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গত নির্বাচনেও ১ কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার টাকার ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ টিপু সুলতান পেশা হিসেবে বর্তমান হলফনামায় কিছু উল্লেখ করেননি। বাড়িভাড়া ও সাংসদ হিসেবে ভাতাসহ বছরে আয় দেখিয়েছেন ২৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগের হলফনামা অনুযায়ী আয় ছিল ৪ লাখ ৮ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে তাঁর আয় বেড়েছে প্রায় সাত গুণ।

বর্তমানে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং ২০ তোলা অলংকার। তাঁর স্ত্রীর ৩১ লাখ ১৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ও ৩০ ভরি অলংকার। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনের সময় তাঁর দেওয়া হলফনামায় এই সাংসদ নিজের অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছিলেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পদ এবং স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ২৯ হাজার টাকার সম্পদ।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে বর্তমানে স্বামী-স্ত্রীর যৌথভাবে আবাসিক দালান রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৬০ লাখ। গতবার স্থাবর সম্পদ ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। গত নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় দায় ছিল ২০ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে            ২৪ লাখ টাকা।

সাংসদ পঙ্কজ নাথ পেশায় নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করে বছরে মোট আয় দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের বছরে আয় ৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামার হিসাব অনুযায়ী তাঁর মোট আয় ছিল ২১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

তাঁর আয় বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ। বর্তমান হলফনামায় পঙ্কজনাথ দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ। তাঁর স্ত্রীর নামে ৩৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ। আর গত বছর তাঁর হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ছিল ৭ লাখ ১১ হাজার টাকার সম্পদ।

অপরদিকে স্থাবর সম্পদের মধ্যে গত নির্বাচনের হলফনামায় নিজের নামে ১৯ লাখ ২৪ হাজার টাকার প্লট এবং স্ত্রীর নামে ৪০ লাখ ৯৬ হাজার টাকার ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এবার তিনি নিজের নামে ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের পূর্বাচলে একটি প্লট, একটি ফ্ল্যাট এবং স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করেছেন।

২০১৪ সালে দেওয়া হলফনামায় ২৩ হাজার ৬৭৯ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করলেও এবার তিনি আট লাখ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন।