বিরোধী জোটের ছয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা

সিলেটের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচজন প্রার্থী। এঁদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধেই কোনো মামলা নেই। জাতীয় পার্টির যে দুজন বর্তমান সাংসদ এবারও মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই। এর বিপরীতে বিএনপি ও এর শরিক দলের যে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের ছয়জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৯টি মামলা রয়েছে। তবে সব কটি মামলাই রাজনৈতিক বলে তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা দাবি করেছেন।

মনোনয়নপত্র বাতিলের পর জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে বর্তমানে ৫১ জন প্রার্থী বৈধ রয়েছেন। এই প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হওয়া ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মোহাম্মদ আবদুর রকিবের। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১৮। মামলার সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন সিলেট-৪ আসনে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী মো. সামসুজ্জামান জামান। তাঁর বিরুদ্ধে বর্তমানে ১০টি মামলা বিচারাধীন এবং একটি মামলা উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত রয়েছে। এসব মামলা সম্পর্কে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘নৈতিক স্খলনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলাগুলো অবশ্যই ভোটারদের ভোট দেওয়ার আগে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। এর বাইরে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা যেতেই পারে।’

সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনে বিএনপির দুজন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে অপর প্রার্থী ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীরের বিরুদ্ধে চলতি বছর দায়ের হাওয়া পাঁচটি মামলা তদন্তাধীন।

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে বিএনপি দুজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আসনটির সাবেক সাংসদ ‘নিখোঁজ’ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও ছেলে। ইলিয়াসের ছেলে মো. আবরার ইলিয়াসের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন আইনে একটি মামলা হয়েছিল। ২০০৮ সালে সেই মামলা থেকে তিনি খালাস পান। এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ জাতীয় পার্টির মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

>বিএনপি ও এর শরিক দলের মনোনীত ১৬ প্রার্থীর ছয়জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৯টি মামলা রয়েছে।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে বিএনপি চারজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অপর তিন প্রার্থীর মধ্যে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা মো. অবদুস সালামের বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম এ হকের বিরুদ্ধে চলতি বছর দায়ের হওয়া একটি মামলা তদন্তাধীন। বিএনপির সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। এ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এবারও তিনি দলের প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান।

সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দুজন। এর মধ্যে দলটির সাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারাধীন। ২০১২ সালে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল দাঙ্গা ও নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে। বিএনপির অপর প্রার্থী মো. সামসুজ্জামান জামানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১০টি মামলা বিচারাধীন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ ইমরান আহমদ। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে বিএনপি তিনজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও একজন জামায়াত নেতা। জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ ও বিএনপি নেতা শরীফ আহমদ লস্কর এবং জামায়াত নেতা এবং এ আসনের সাবেক সাংসদ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার। তাঁর বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাগপঞ্জ) আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন চারজন। এর মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা, একজন জামায়াতে ইসলামী ও একজন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা। জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। বিএনপির অপর নেতা হেলাল খানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। জামায়াতের নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১০ ও ২০১৩ সালে দুটি মামলা হয়েছিল। এ দুটি মামলা থেকে তিনি বেকসুর খালাস পান। ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রকিবের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে।