তাবলিগে বিভক্তির অশান্তি সারা দেশে

তাবলিগের দুই পক্ষের বিভক্তি নিয়ে অশান্তি এখন ইজতেমার মাঠ ছাপিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত শনিবার দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও তিন শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পরও তাঁরা থেমে নেই। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। এক জায়গায় সংঘর্ষের খবরও পাওয়া গেছে।

তাবলিগের আমির ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর একটি বক্তব্য নিয়ে এই বিরোধের সূত্রপাত। বাংলাদেশে সাদবিরোধীদের সঙ্গে রয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সমর্থক ও কওমি মাদ্রাসার আলেমরা। আর সাদ কান্ধলভীর পক্ষে আছেন তাবলিগ জামাতের নিয়মিত নেতাদের একটি অংশ। সাদবিরোধীরা তাবলিগের এ বিরোধের বিষয়ে ভারতের বিখ্যাত দেওবন্দ মাদ্রাসার নির্দেশনা অনুসরণের দাবি করে আসছেন।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া খবরে দেখা গেছে, গতকালও সাদবিরোধীরা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন। এর মধ্যে পার্বতীপুরে ওই দুই দলের সংঘর্ষে বাবা–ছেলেসহ তিনজন আহত হয়েছেন। গত সোমবার রাতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিরা হলেন সাদ–সমর্থক নুরনবী (৫৫), আকতার হোসেন (৬৫) ও তাঁর ছেলে সাদবিরোধী যোবায়ের হোসেন (২৬)।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত সোমবার সকালে ঢাকার সাভার থেকে তাবলিগ জামাতের ১৮ জনের একটি দল পার্বতীপুরের শহীদ মিনারসংলগ্ন মসজিদে ওঠেন। এই দলটি ছিল সাদ–সমর্থকদের। খবর পেয়ে সাদবিরোধী ৫০–৬০ জন সমর্থক সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এসে তাঁদের মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পার্বতীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে সাদপন্থীদের ঢাকাগামী নৈশকোচে তুলে দেয়। তবে কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি।

রাজধানীতে বিক্ষোভ, যানজট
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা দিকে উত্তরায় বিক্ষোভ করেছেন সাদবিরোধীরা। ‘বৃহত্তর উত্তরার ওলামায়ে কেরাম এবং তাবলিগের সাথিদের’ ব্যানারে এই বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল নিয়ে জসীমউদ্দীন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে আবার আবদুল্লাহপুর গিয়ে সমবেত হন। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তাঁরা। এ সময় ওই রাস্তায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল ব্যাহত হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

মিছিল–সমাবেশে তাঁরা হত্যা এবং হামলার বিচার, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, যাদের হুকুমে হামলা হয়েছে তাদের গ্রেপ্তার এবং ইজতেমা ময়দানের মসজিদের কার্যক্রম চালু করে দেওয়ার দাবি জানান। দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন তাঁরা।

ট্রাফিক উত্তর বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) আসাদুজ্জামান বলেন, সকাল ১০টার পরে বিক্ষোভকারীরা উত্তরার পলওয়েল শপিং সেন্টারের সামনে সমবেত হয়ে মিছিল নিয়ে প্রথমে জসীমউদ্দীনে যান। পরে তাঁরা আবার মিছিল করতে করতে আবদুল্লাহপুরে আসেন এবং সমাবেশ করেন। মিছিলের কারণে প্রথমে রাজধানীতে প্রবেশের দিকে এবং পরে রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার পথে যানজটের সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
গতকাল চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ইজতেমা মাঠে মুসল্লি হতাহত হওয়ার দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না। তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

সেই দিন প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক উল্লেখ করে জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, যথাযথভাবে ব্যবস্থা নিলে মানুষ হতাহত হতো না। এটি পরিকল্পিত হামলা উল্লেখ উসকানি দেওয়ার জন্য ওয়াসিফুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন ও ফরিদ উদ্দীন মাসউদকে অভিযুক্ত করেন বাবুনগরী। হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।