'শিশুটির শরীরে ধারালো কিছুর আঘাত নেই'

রাজধানীর বাংলামোটরের একটি বাসা থেকে বুধবার এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর বাংলামোটরের একটি বাসা থেকে বুধবার এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর বাংলামোটরের লিংক রোডের খোদেজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের ১৬ নম্বর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা নূর সাফায়েত নামের শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তার শরীরে ধারালো কোনো বস্তুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তার শরীরে ধারালো কোনো বস্তুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।


মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তে তাঁর যকৃৎ ও মস্তিষ্কে কিছু সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে। কপালে ছোট দুটি আঘাত আছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোনো রক্তক্ষরণ নেই। তার গলব্লাডার স্বাভাবিকের চেয়ে বড়। ধারাবাহিকভাবে যারা না খেয়ে থাকে, তাদের গলব্লাডার সাধারণত এমন হয়ে থাকে। শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছিল।

মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে যকৃৎ, হৃদ্‌যন্ত্র ও গলব্লাডার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

গতকাল বাংলামোটরের লিংক রোডের খোদেজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের ১৬ নম্বর বাড়ির ভেতর থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে বেলা ১টা ৫০ মিনিটে ওই শিশুর বাবা নুরুজ্জামান কাজলকে আটক করে শাহবাগ থানার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

গতকাল সকালে ওই বাসায় এক বাবা তাঁর দুই শিশুসন্তানকে ‘জিম্মি’ করে রেখেছেন—এমন সংবাদে বাসাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। কিছুক্ষণ পর র‍্যাব, পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যেরা ঘটনাস্থলে যান।

নূর সাফায়েতকে হত্যার অভিযোগে গতকাল রাতে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। বাবা নুরুজ্জামান কাজলকে আসামি করে মামলাটি করেন সাফায়েতের মা মালিহা আক্তার।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, সাফায়েতের মা গতকাল রাতে যে অভিযোগ দিয়েছেন, এর ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। সে অনুযায়ী মামলার পরবর্তী কার্যক্রম চলবে।

নুরুজ্জামান কাজলের পরিবারের সদস্যেরা জানান, এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে কাজলের বাবা মনু মেম্বারের পরিবারের। কাজলের আচার-আচরণের জন্য পরিবারের সদস্যরা তাঁর ওপর বিরক্ত ছিলেন। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ওই বাসার দোতলায় থাকতেন কাজল। পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তাঁর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাস খানেক আগে তাঁর স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা আকিল জামান বলেন, কয়েক মাস আগে স্ত্রীকেও মারধর করেন কাজল। প্রতিবেশীরা এসে তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। নির্যাতন সইতে না পেরে স্ত্রী চলে গেছেন। বাচ্চা দুটো বাবার সঙ্গে ছিল।

নুরুজ্জামান কাজলের ভাই নুরুল হুদা উজ্জ্বল অভিযোগ করেন, তাঁর ভাই নুরুজ্জামান কাজল দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলেকে হত্যা করেছেন। তাঁর হাতে রামদা ছিল।