১৩ প্রার্থীর দায়দেনা ৬২ কোটি টাকা

>

ব্যাংকে ঋণ থাকা ১১ প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন আওয়ামী লীগের। ব্যক্তিগত ধার নেওয়া প্রার্থী দুজনও আওয়ামী লীগের।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ছয়টি আসন থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র হিসেবে ৫১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ রয়েছে। আর অপর দুজনের ব্যক্তিগত ধারদেনা রয়েছে। সব মিলে ওই ঋণ-দেনা ও ধারের পরিমাণ প্রায় ৬২ কোটি টাকা। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ব্যাংকে ঋণ থাকা ১১ প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন আওয়ামী লীগের। ব্যক্তিগত ধার নেওয়া প্রার্থী দুজনও আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির একজন, গণফ্রন্টের একজন, বিএনএফের একজন, বিএনপি ও জামায়াতের তিনজন এবং একজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ রয়েছে।

খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকঋণ আছে শুধু বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির অশোক কুমার সরকারের। তাঁর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক বটিয়াঘাটা শাখায় আড়াই লাখ টাকার সিসি ঋণ রয়েছে।

খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও গণফ্রন্টের মনিরা বেগমের ব্যাংকঋণ আছে। শেখ সালাহউদ্দিন ২৯ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা বেসিক ব্যাংক লিমিটেড থেকে ঋণ নিয়েছেন। তবে কোন শাখা থেকে ওই ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা তিনি উল্লেখ করেননি। আর মনিরা বেগমের দায় রয়েছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের কাছে। দায়ের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাতজন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের কোনো ব্যাংকঋণ না থাকলেও বিভিন্ন লোকের কাছে দায় রয়েছে ৭ লাখ টাকার। ওই আসনের বিএনপি প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের শেয়ার মার্কেটের বিনিয়োগের বিপরীতে গৃহীত মার্জিন ঋণ নেওয়া আছে ৩৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে ৯ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম মুর্শেদীর কোনো ব্যাংকঋণ নেই। তবে তাঁর স্ত্রী শারমিন সালামের কাছে ১ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তাঁর দায় রয়েছে। এ ছাড়া তিনি সেলটেক প্রাইভেট লিমিটেডের ফান্ড থেকে ৫ কোটি ও মেয়ে শেহরিন সালাম ঐশীর কাছে ৭৩ লাখ টাকা দায় আছেন।

এ ছাড়া এই আসনের বিএনপির শরীফ শাহ কামাল তাজের ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড গুলশান শাখা থেকে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া আছে। বিএনএফের শেখ হাবিবুর রহমান ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৪০ লাখ টাকা, ডিবিএইচ ব্যাংক লিমিটেড থেকে ৪ লাখ টাকা ও আইপিডিসি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত দায় রয়েছে ৫ লাখ টাকা।

খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে সাতজন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ব্যাংকঋণ রয়েছে। আর তাঁর ব্যক্তিগত ধার আছে ৩৫ লাখ টাকা।

খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনে ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের মো. আক্তারুজ্জামানের প্রাইম ব্যাংক খুলনা শাখায় ১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। তিনি এই ঋণ নিয়েছেন ঠিকাদারি কার্যাদেশের বিপরীতে। আর বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদ (জামায়াত) তামিম এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ইসলামী ব্যাংক দৌলতপুর শাখা থেকে ১২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলামের মধুমতি ব্যাংক খুলনা শাখায় ১৮ কোটি ৫২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক খুলনা শাখায় ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরের ইসলামী ব্যাংকে ঋণ ৫৬ হাজার টাকা।