পাকিস্তান হাইকমিশনে গোপন বৈঠক করেছেন ফখরুল

লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআইয়ের (পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা) গোপন বৈঠক হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটি আরও অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান হাইকমিশনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গোপন বৈঠক হয়েছে। আর একে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ’ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ রোববার দুপুরে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে দূতাবাসের সঙ্গে যাতায়াত থাকতে পারে। তবে বিজয়ের এই মাসে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ জনমনে প্রশ্নের সঞ্চার করে।

আবদুর রহমান বলেন, একদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআইয়ের সঙ্গে গোপন বৈঠক, অন্যদিকে পাকিস্তান হাইকমিশনে মির্জা ফখরুলের গোপন বৈঠক ষড়যন্ত্রের আভাস দেয়। দুই বৈঠক একই সূত্রে গাঁথা। এই সাক্ষাৎ আসন্ন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতিকে বিনষ্ট করার দুরভিসন্ধি।

বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আবদুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে বিএনপি নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে কী ধরনের বাণিজ্য করেছে। একটি রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন নিয়ে এ ধরনের বাণিজ্য হতে পারে না। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএনপির মনোনয়ন–বাণিজ্য নিয়ে সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীরা যে সন্ত্রাস ও অগ্নিকাণ্ড চালাচ্ছে, তারই অংশ হিসেবে গতকাল ও আজ বিএনপির গুলশান ও পল্টন কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই হামলা আসন্ন সংসদ নির্বাচনের পরিবেশকেই বিঘ্নিত করে না, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সুষ্ঠু ধারাকেও ব্যাহত করে।

আবদুর রহমান বলেন, বিএনপির এ ধরনের আচরণ, সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করে। ‘আদর্শবিবর্জিত’ একটি দলের প্রধান যখন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হন এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি দুর্নীতির দায়ে যখন পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করেন, তখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আস্ফালন শুধু রাজনৈতিক পরিবেশকে নয়, সামাজিক পরিবেশকেও বিনষ্ট করে।

আবদুর রহমান বলেন, মনোনয়ন–বাণিজ্যের কারণে বিএনপি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ এবং এর মাধ্যমে দলের নেতৃত্বের ওপর আস্থাহীনতার প্রকাশ পায়। এমন মনোনয়ন–বাণিজ্যের নেতৃত্বে আছেন মির্জা ফখরুল ও রুহুল কবির রিজভী। যার নেপথ্যের নায়ক সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান। একটি নীতিভ্রষ্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে দেশের জনগণ এর বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে পারে না।

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের বিষয়ে আবদুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার বলে আসছে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট কোনো রাজনৈতিক জোট নয়, এটা আদর্শিক জোট। বিএনপির প্রধান শরিক ঐক্যফ্রন্ট নয়, জামায়াত। গতকাল মনোনয়ন ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে আবারও সেটা প্রমাণিত। শরিক দল হিসেবে জামায়াত আসন পেয়েছে ২৩টি এবং ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে ১৭ টি। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি গাঁটছড়া সম্পর্ক, যা অবিচ্ছেদ্য।

আওয়ামী লীগের শরিক দল জাতীয় পার্টি কতগুলো আসন পাচ্ছে— এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুর রহমান বলেন, ‘আজকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই বিষয়টি আমরা পরিষ্কার করতে পারব আজকে বিকেল নাগাদ। ব্যাপারটা জানার জন্য আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।’

কত আসনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মীমাংসা হয়েছে, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে আনুমানিক কিছু সংবাদমাধ্যমে বলা উচিত হবে না। আমরা আশা করি সন্তোষজনক একটি মীমাংসা হবে।’

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে আবদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকজন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দুই থেকে তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাহারের বাকি আছেন। আশা করছি বাকিগুলো আজকে প্রত্যাহার হয়ে যাবে। আমাদের দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খোলা চিঠির আহ্বানে সবাই সাড়া দিয়েছেন। যে দুই-একজন বাকি আছে, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।