তথ্য গোপন, তবু প্রার্থী হাজি সেলিম

হাজি মো. সেলিম
হাজি মো. সেলিম

ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজি মো. সেলিম নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে আরও ১৩৭টি মামলা ছিল। এসব তথ্য তিনি চেপে গেছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আদালত সূত্রে জানা যায়, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালে এই মামলায় হাজি সেলিমের ১৩ বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট হাজি সেলিমকে খালাস দেন। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আপিল বিভাগ হাজি সেলিমের আপিল নতুন করে শুনানি নিয়ে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেন। বর্তমানে হাইকোর্টে এই মামলা বিচারাধীন।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, আপিল বিভাগের রায়ে হাজি সেলিমের সাজা স্থগিত বা বাতিল করা হয়নি। দুদক হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল উপস্থাপন করেনি। এ কারণে আপিল বিভাগ কিছু নির্দেশনা দিয়ে মামলাটি হাইকোর্টে ফেরত পাঠান। সম্প্রতি হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে, দুই বছর বা তার অধিক দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি পুরোপুরি খালাস না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত বা বাতিল হলেই কেবল নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ এবং সংবিধানের আলোকে দণ্ডিতরা আপিল বিভাগে খালাসের আগ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অন্যূন দুই বছর কারও সাজা হলে মুক্তিলাভের পরও পাঁচ বছরের আগে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি ‘পেন্ডিং’ আছে। ২০১০ সাল থেকে এর কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে। তবে হলফনামায় মামলার বিষয়টি উল্লেখ করা আছে কি না, তা তাঁর জানা নেই।

হাজি সেলিম অসুস্থ থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কে এম আজম আলী প্রথম আলোকে বলেন, হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। মামলা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো যাঁরা দেখেন, তাঁরা জানিয়েছেন তাঁর কোনো সাজা বা সমস্যা নেই। তাই মনোনয়নপত্র গৃহীত হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় করা মামলা এবং যুবদলের কর্মী হান্নান হত্যা, চাঁদাবাজি, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে ১৩৭টি মামলা করা হয়েছিল। এসব মামলার মধ্যে হত্যাসহ সাতটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। কিছু মামলা আপস-মীমাংসা হয়েছে। বাকি মামলাগুলো ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ প্রত্যাহার করা হয়েছে।