প্রার্থী জোটের, বিএনপিতে ক্ষোভ

কাউখালীতে গতকাল জোটের প্রার্থীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিএনপির কর্মীরা।  প্রথম আলো
কাউখালীতে গতকাল জোটের প্রার্থীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন বিএনপির কর্মীরা। প্রথম আলো

পিরোজপুরে তিনটি আসনের মধ্যে দুটিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির প্রার্থী চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার কাউখালী সদরে বিএনপির একাংশ জোটের প্রার্থী লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত তিনটি আসনের চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়নের চিঠি জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসনে জোটের চূড়ান্ত প্রার্থী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী। এ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, শামীম সাঈদী ও জেলা বিএনপির সদস্য সরোয়ার হোসেন। আর পিরোজপুর-২ (কাউখালী-ভান্ডারিয়া-ইন্দুরকানি) আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। এ আসনে ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ সোহেল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।

রুহুল আমিনের দলীয় মনোনয়ন আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে কয়েক দিন ধরে পিরোজপুর-১ আসন নিয়ে জোটের দুই শরিক দল জাতীয় পার্টি (জাফর) ও জামায়াতের মধ্যে লড়াই চলে। গত শনিবার রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতের শামীম সাঈদীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে চিঠি দেন। পিরোজপুর-২ আসনটিও জোটের শরিক লেবার পার্টিকে দেওয়া হয়।

এদিকে গতকাল দুপুরে কাউখালী সদরে মোস্তাফিজুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন ভান্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ সোহেলের সমর্থকেরা। উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম আহসান কবির বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমরা তাঁর পক্ষে। কতিপয় যুবক মোস্তাফিজুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন বলে শুনেছি।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রয়েছেন। আহমেদ সোহেল মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর ১০-১২ জন সমর্থক কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। এতে কিছু যায় আসে না। আমি আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম।’

ছিটকে পড়লেন মেজবাউদ্দিন

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে নাগরিক ঐক্যের জে এম নুরুর রহমান ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়েছেন। ছিটকে পড়লেন বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ মেজবাউদ্দিন ফরহাদ। তিনি ২০০৮ সালে এই আসনের সাংসদ ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই উপজেলার অন্তত ছয়জন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নুরুর রহমান এলাকায় থাকেন না। এলাকার কোনো নেতা-কর্মী ও লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ নেই। গত পাঁচ বছর বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব পরিস্থিতির সবকিছুই সামাল দিয়েছেন মেজবাউদ্দীন ফরহাদ। তাঁকে মনোনয়ন না দেওয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

মেজবাউদ্দিন বলেন, ‘সরকারের নির্যাতন, হামলা, মামলা, জেল-জুলুম সহ্য করেছি। দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আমরা দুঃসময় অতিক্রম করেছি। এখন যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন না। এমন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতা-কর্মীরা বিস্মিত ও হতাশ।’

এ বিষয়ে নুরুর রহমান বলেন, ‘আমি সারা জীবন বিএনপির রাজনীতি করেছি। এখন যাঁরা আমার এলাকায় বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের সবার সঙ্গে আমি যুবদল করেছি। মনোনয়ন পাওয়ার পর তাঁরা অনানুষ্ঠানিকভাবে সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আশা করি তাঁরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আমার পক্ষে কাজ করবেন।’

বিএনপির দুই প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

রাজবাড়ীতে বিএনপির দুই প্রার্থীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলা বিএনপির একাংশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় শহরের রেলস্টেশন এলাকায় জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ খালেকের ব্যক্তিগত চেম্বারে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

এ সময় এম এ খালেকসহ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক গোলাম কাশেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাজবাড়ীতে দুটি সংসদীয় আসন। এর মধ্যে রাজবাড়ী-১ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম এবং রাজবাড়ী-২ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিরুল হককে (সাবু) প্রার্থী করা হয়েছে।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অবিলম্বে খৈয়ম ও সাবুর দলীয় মনোনয়ন বাতিল করতে হবে। দুই নেতাকে দলীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায় না। দলের নেতা-কর্মীদের সমস্যা ও তাঁদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলায় দুই নেতা পাশে থাকেননি।

এ বিষয়ে নাসিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড আমাদের ত্যাগ ও জনপ্রিয়তা যাচাই করেই মনোনয়ন দিয়েছে।’

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল এবং প্রতিনিধি পিরোজপুর ও রাজবাড়ী]