পাঁচ 'হেভিওয়েট'প্রার্থী ভোটে

শাহ মো. ওয়ারেছ আলী, ফরিদুল কবির, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মোস্তাফিজুর রহমান, সুলতান মাহমুদ
শাহ মো. ওয়ারেছ আলী, ফরিদুল কবির, এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, মোস্তাফিজুর রহমান, সুলতান মাহমুদ

জামালপুরের পাঁচটি আসনের পাঁচটিতেই বিএনপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীরা মনোনয়ন পেয়েছেন। এসব প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় নেতা–কর্মীরাও স্বস্তিতে রয়েছেন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট হলে জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে নেতা–কর্মীরা বলছেন। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে তাঁদের শঙ্কা রয়েছে।

প্রার্থীরা হলেন জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসনে এম রশিদুজ্জামান ওরফে মিল্লাত, জামালপুর-২ আসনে সুলতান মাহমুদ ওরফে বাবু, জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাবুল, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনে ফরিদুল কবির তালুকদার ওরফে শামীম ও জামালপুর-৫ (সদর) আসনে শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী ওরফে মামুন।

ওই প্রার্থীদের নিয়ে বিএনপির প্রায় ১৫ জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যাঁদের নাম চূড়ান্ত হয়েছে, তাঁরা সবাই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী। একমাত্র তাঁদের দিয়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে দলের তৃণমূল থেকে জেলার সর্বোচ্চ ফোরাম পর্যন্ত তাঁদের নিয়েই আলোচনা চলছিল। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ওপর আস্থা রেখে কেন্দ্র থেকেও তাঁদেরই মনোনয়ন দেওয়ায় ওই নেতা-কর্মীরাও অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছেন। কিন্তু ভোট গ্রহণ নিয়ে তাঁদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। প্রত্যেক প্রার্থী ও অনেক নেতা–কর্মীর নামে রয়েছে একাধিক মামলা। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ওই সব মামলায় থাকা আসামিদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। নির্বাচনের মাঠে তৎপরতা দেখাতে গেলে যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয়রানি শুরু করে—এমন আতঙ্ক তাঁদের মধ্যে রয়েছে। পরাজয়ের ভয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ইঙ্গিতে এসব ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তারপরও এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়ে তাঁরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার কথাও বলেছেন।

জামালপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদ থেকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাঁরা তো মনে করছেন, তাঁরা এখনো সরকারি দলেই রয়েছেন। তাঁরা (ক্ষমতাসীনেরা) বিভিন্নভাবে হুমকিধমকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং যেকোনোভাবেই ভোট নিয়ে নেবেন। ওই সব পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আমাদের প্রার্থীদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও সব সময় যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে জামালপুর-৫ আসনের প্রার্থীর তৃণমূল পর্যন্ত ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা এবার আসনগুলো পুনরুদ্ধারে শতভাগ আশাবাদী। তবে ভোটাররা যদি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ভোটও যদি নিরপেক্ষ হয়, সব কটি আসনেই আমরা বিজয়ী হব।’

জামালপুর-১ আসনের প্রার্থী এম রশিদুজ্জামান বলেন, ‘কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা তাঁদের নিজের ভোটটি প্রয়োগ করতে পারলে বিশাল ভোটের ব্যবধানে আমি নির্বাচিত হব। তবে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোট গ্রহণ নিয়ে এখনো শঙ্কা কাজ করছে, তাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না?’

জামালপুর-২ আসনের প্রার্থী সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা–কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অতি উৎসাহী হয়ে আমাদের নির্বাচন পরিচালনা করবেন—এমন নেতা–কর্মীদের হুমকিধমকি দিচ্ছেন। ফলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। নির্বাচনী এলাকার পরিবেশ এখন অনেকটাই থমথমে। ১৫ তারিখের পর থেকে বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝা যাবে।’ জামালপুর-৩ আসনের প্রার্থী মোস্তাফিজুর বলেন, ‘প্রথমত নির্বাচনটি ভোটযুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমাদের নেত্রীকে মুক্তি ও হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা এই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ তৈরি হয়নি।’

জামালপুর-৫ আসনের প্রার্থী শাহ্‌ মো. ওয়ারেছ আলী বলেন, ‘আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের পরিবেশ চাই, যাতে সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন। এ নির্বাচন মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। এর মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভোটারদের ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে সবার মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। তৃণমূলে গেলে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না—আমাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। তাতেই প্রমাণ হয়, মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’