পাঁচটি আসনে বিএনপির নতুন মুখ, আ.লীগের সবাই সাংসদ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি আসনে শেষমেশ বিএনপির একক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচটিতেই নতুন মুখ। এদিকে সাতটি আসনে আওয়ামী লীগ ও জোটের প্রার্থীরা সবাই বর্তমান সাংসদ।

বিএনপি একটি আসন ছেড়ে দিয়েছে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সাংসদ কাজী রফিকুল ইসলাম। এখানে দলের আরেক নেতা মোহাম্মদ শোকরানা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী সাংসদ আবদুল মান্নান।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে মাহমুদুর রহমান মান্নার হাতে এবার ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিয়েছে বিএনপি। এর আগে তিনি ১৯৯১ সালে জনতা মুক্তি পার্টির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। একই আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। দুবারই তিনি ধানের শীষের প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি মনোনয়নবঞ্চিত হন। এবার এই আসনে জামায়াতের সাবেক সাংসদ আবুল কালাম শাহাদুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ।

১৯৯১ সালে আসনটি জামায়াতের দখলে ছিল। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আসনটি দখলে ছিল বিএনপির। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন শরিফুল ইসলাম।

বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে বিএনপি চূড়ান্ত মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে জেলায় একমাত্র নারী প্রার্থী মাছুদা মোমিন তালুকদারকে। তিনি দলের সাবেক সাংসদ ও রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মোমিন তালুকদারের স্ত্রী। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে মোমিন তালুকদার পলাতক। এখানে মাছুদা মোমিন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের একক প্রার্থী। তিনি নতুন মুখ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ জোট থেকে এখানে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির সাংসদ নুরুল ইসলাম তালুকদার।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাংসদ হন আবদুল মোমিন তালুকদার। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে নিজ এলাকায় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হত্যাসহ লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ বছর তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সেই থেকে পলাতক তিনি। দল তাঁকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছিল।

বগুড়া-৪ আসনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মোশারফ হোসেন। তিনি নতুন মুখ। এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া সাবেক সাংসদ জিয়াউল হক মোল্লা এবং জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এবং জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী তায়েব আলীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় মোশারফ বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে একক প্রার্থী।

১৯৯১ সালে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে সাংসদ নির্বাচিত হন দলের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক মোল্লা (প্রয়াত)। ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচন ছাড়াও ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তাঁর ছেলে জিয়াউল হক মোল্লা সাংসদ হন। ২০০৮ সালে ধানের শীষের সাংসদ হন মোস্তফা আলী।

এই আসনে আওয়ামী লীগ জোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাংসদ এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন।

বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী হয়েছেন দলের সাবেক সাংসদ জি এম সিরাজ। একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জানে আলম গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত চারবার ধানের শীষ প্রতীকে সাংসদ হন জি এম সিরাজ।

এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী সাংসদ হাবিবর রহমান।

বগুড়া-৬ (সদর) ও ৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র ইসি বাতিল করায় বিকল্প হিসেবে বগুড়া-৬ আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বগুড়ায় নতুন মুখ।

বগুড়া-৬ আসন ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল বিএনপির দখলে ছিল। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ধানের শীষ নিয়ে সাংসদ হন মজিবুর রহমান। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চার দফা সাংসদ নির্বাচিত হন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের জোট থেকে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির সাংসদ নুরুল ইসলাম ওমর।

অন্যদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মভিটার আসন বগুড়া-৭। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ দফা সাংসদ নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। এ আসনে ধানের শীষের চূড়ান্ত ও একক প্রার্থী হয়েছেন গাবতলী উপজেলা বিএনপির সম্পাদক মোরশেদ মিলটন।

এ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত জোটের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির সাংসদ মুহাম্মদ আলতাফ আলী।