রাজশাহীতে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, হুমকি-ধমকি

প্রতীক বরাদ্দের পরপর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা গণসংযোগ ও প্রচারে মাঠে নামতে না–নামতেই বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা ও গণগ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। প্রতিপক্ষের প্রার্থী ও নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা, নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর, পোস্টার–প্রতীক পোড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ:

রাজশাহী
মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সদর আসনে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ওয়ালিউল হক। ওয়ালিউল হক অভিযোগ করেন, গত সোমবার রাত ১২টার দিকে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা নগরের ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। এরপর এসব পোস্টার, ফেস্টুন পদদলিত করেন স্থানীয় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম।

অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ও ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।

অপর দিকে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বিএনপির প্রার্থী শফিকুল হকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শেখ মকবুল হোসেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গতকাল তাঁদের পোস্টার কেটে ফেলার অভিযোগ করেছেন।

গত সোমবার রাতে নগরের ডাঁসমারী এলাকায় একটি নৌকা প্রতীক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করা হবে।

বাগমারা
এখানে বিএনপির দলীয় সাংসদ প্রার্থী আবু হেনা মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, এ আসনে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) বিএনপির প্রার্থীর পোস্টার টাঙানো, ক্যাম্প স্থাপনে বাধা দেওয়াসহ ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া মামলা ছাড়াই পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের গণগ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। পুলিশের সহযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন মারপিট করছেন। উপজেলার গোপালপুর, দেউলা, জ্যোতিগঞ্জ, হাট খুঁজিপুর, যাত্রাগাছি, যোগীপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রচারে বাধা দেওয়া হয়েছে। হাট খুঁজিপুর এলাকায় বিএনপির কর্মী আশরাফ হোসেন ও সোহেল রানাকে প্রতিপক্ষের লোকজন পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আবু হেনার অভিযোগের বিষয়ে বাগমারা থানার ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, পুলিশ কাউকে হয়রানি বা পোস্টার টানাতে বাধা দিচ্ছে বা সহযোগিতা করছে না, এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নির্বাচন বানচাল এবং নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মতিউর রহমান বলেন, আবু হেনা জনবিচ্ছিন্ন একজন নেতা, তাঁর প্রতি লোকজন ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া তাঁদের দলীয় কোন্দল রয়েছে। তাঁরাই এসব করতে পারেন। আওয়ামী লীগের লোকজন এসবের সঙ্গে জড়িত নয়।

নাটোর
সদর ও সিংড়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ চারজন আহত হয়েছেন। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, বিকেলে সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকায় বিএনপি নেতা–কর্মীরা সভা করার সময় খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন নৌকার কর্মী হামলা করেন। এতে বিএনপির দুই কর্মী আহত হন। সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচেন খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম। তবে সেখান থেকে তিনি হয়বতপুর বাজারে এলে হামলাকারীরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কুপিয়ে আহত করে।

এ ছাড়া মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের তেলকুপি মাদ্রাসা থেকে দোয়া মাহফিলের জন্য রান্না করা তবারক লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু হাইকোর্ট থেকে মনোনয়ন পাওয়ায় স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য বাবর আলী ও শাহ আলম এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। শাহ আলম বলেন, নৌকার কর্মীরা ডেকচিসহ সব তবারক নিয়ে গেছে।

নাটোর সদর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিংড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও পোস্টার পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি গ্রামে বিএনপির প্রার্থীর পোস্টার পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। তবে কারা এ কাজ করেছে, তা কেউ বলতে পারেননি। একই দিন সন্ধ্যায় সুকাশ ইউনিয়নের জয়কুঁড়ি বাজারে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং যুবদলের এক নেতাকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী দাউদার মাহমুদ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান শেখ বলেন, ‘বিএনপির নেতারা নিজেরাই পোস্টার পুড়িয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।’

গুরুদাসপুর
নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল আজিজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিনেই উপজেলার নয়াবাজার এলাকায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীকে নৌকার সমর্থকেরা মারপিট করেছেন। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে পোড়ানো হয়েছে। নৌকা প্রার্থীর সমর্থকেরা পোস্টার সাঁটাতে বাধাসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

নৌকার প্রার্থী আবদুল কুদ্দুস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আবদুল আজিজের নিজের অবস্থান নড়বড়ে হওয়ায় নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।