আ.লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে আহত শতাধিক

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মঙ্গলবার কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় দলের শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। পুলিশ আটজনকে আটক করেছে। এদিকে দুমকি উপজেলায় পুলিশের লাঠিপেটায় বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা পণ্ড হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা তিনটার দিকে রাঙ্গাবালীর খালগোড়া বাজারের জাহাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির প্রার্থী এ বি এম মোশাররফ হোসেনের পক্ষে সভার আয়োজন করা হয়। একই সময় বাজারের বালুর মাঠ এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিব্বুর রহমানের সমর্থনে অপর একটি সভার আয়োজন করা হয়। একই স্থানে পাল্টাপাল্টি সভা আহ্বান করার কারণে দুই পক্ষের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিকেল সাড়ে চারটার সময় বিএনপি-আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দুই পক্ষের মধ্যে দেড় ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। খবর পাওয়ার পর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে আটজনকে আটক করে। তবে এতে দুই পক্ষের ডাকা সভা পণ্ড হয়ে যায়।

দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল ইসলাম, রাঙ্গাবালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি কবির তালুকদার, উপজেলা যুবদলের সদস্য কাওসার আহমেদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি পারভেজ মাসুদ, রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোখলেছ মীর, রাঙ্গাবালী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. জাকির হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাব্বি হাওলাদারসহ শতাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন।

মহিব্বুর রহমান বলেন, ‘আমি কলাপাড়ায় ছিলাম। আসলে ওখানে কী ঘটেছে, তা আমি ভালোভাবে জানি না। তবে যত দূর শুনেছি, বিএনপির কর্মীরা আমার উঠান বৈঠকে হামলা করেছে।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, খালগোড়া বাজার এলাকার ওই মাদ্রাসা মাঠে তাঁদের পূর্বনির্ধারিত সভা ছিল। সভার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তাঁদের সভায় হামলা করেছেন। পুলিশ উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত না করে বিএনপির কর্মীদের মারধর করেছে। তাঁরা পুলিশের এমন আচরণের নিন্দা জানান। মোশাররফ আরও বলেন, সন্ধ্যার পর রাঙ্গাবালী উপজেলা যুবলীগের নেতা রিয়াজ মৃধার নেতৃত্বে রাঙ্গাবালী উপজেলার বাহেরচর বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্বাস উদ্দিনের দোকানসহ বাহেরচর বাজারে বিএনপির মালিকানাধীন ১০-১৫টি দোকান লুটপাট করা হয়েছে।

রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিলন কৃষ্ণ মিত্র বলেন, পাশাপাশি সভা হওয়ার কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। ঘটনাস্থল থেকে আটজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পটুয়াখালী ১ (সদর-মির্জাগঞ্জ ও দুমকি) আসনের দুমকিতে পুলিশের লাঠিপেটায় বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা পণ্ড হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বিকেলে গ্রামীণ ব্যাংক সড়কের একটি বাড়িতে বিএনপির উঠান বৈঠক চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির প্রার্থী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর সমর্থনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. খলিলুর রহমানের ভাড়া বাড়ির উঠানে নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি সভা চলছিল। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেই উপস্থিত নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় সভায় উপস্থিত নেতা–কর্মীরা দৌড়ে যাঁরা যেভাবে পারেন পালিয়ে যান।

দুমকি উপজেলা বিএনপির সভাপতি খলিলুর বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুমকি থানার পুলিশ সভাস্থলে হামলা ও লাঠিপেটা করে সভা পণ্ড করে দিয়েছে। এ ঘটনায় তাঁদের একজন কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কর্মীদের মোটরসাইকেল পুলিশ জব্দ করে নিয়ে গেছে।

দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশ লাঠিপেটা করেনি। বিএনপির দলীয় কোন্দল থেকে বৈঠকে হট্টগোল দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে ছয়টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।