আলোচনায় সেলিম আর মন্টু

হাজি সেলিম ও মোস্তাফা মহসীন মন্টু
হাজি সেলিম ও মোস্তাফা মহসীন মন্টু

হাঁটু মুড়ে বসে সুড়ুৎ সুড়ুৎ চায়ে চুমুক দিচ্ছিলেন জয়নাল মিয়া। বয়স ৬০ পার হয়েছে। ঢাকার লালবাগে রাস্তার পাশে এক চায়ের দোকানে পাওয়া গেল তাঁকে।

নির্বাচনের কথা তুলতেই মুচকি হেসে বলেন, ‘ভোটটা যাতে সুষ্ঠু হয়, সেই দোয়াই করি। আগের এমপি আবার প্রার্থী হইছেন। আরেক দলের নতুন প্রার্থী, এলাকায় কতটা সুবিধা করতে পারে, এখন সেটাই দেখা যাবে।’

লালবাগ, চকবাজার, পোস্তা, ঢাকেশ্বরী, হোসনী দালান, ইসলামপুর, বাবুবাজারসহ কিছু এলাকা নিয়ে ঢাকা-৭ আসন। এ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের হাজি সেলিম এবারও নৌকা প্রতীকে লড়ছেন।

অন্যদিকে, গণফোরাম নেতা মোস্তাফা মহসীন মন্টু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষে লড়বেন। এ আসনে তিনি নতুন প্রার্থী।

আজ ঢাকা-৭ আসনের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেল, প্রচার তেমন শুরু হয়নি। হাজি সেলিম কিছুটা শুরু করেছেন। তবে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচার এলাকাবাসীর নজরে পড়েনি।

চকবাজারের পান ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোলায়মান বলেন, ‘হাজি সেলিম তো এলাকার ছেলে, আর মন্টু নদীর ওই পাড়ের ছেলে। বোঝাই যায় যে এলাকার ছেলে সুবিধাজনক জায়গায় আছে।’ বয়স্ক ও রাজনীতির খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁদের কাছে মোস্তাফা মহসীন মন্টু আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সালে কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকা থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তখন বিএনপি প্রার্থী আমান উল্লাহ আমানের কাছে হেরে যান। কিন্তু এবার বিএনপির প্রতীকে তিনি ওই আসনে দাঁড়াতে চাইলে তাঁকে ঢাকা-৭ দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা-৭ আসনের কয়েকজন ভোটার জানান, মন্টু এলাকায় নতুন বা পরিচিতি তেমন না থাকলেও আওয়ামীবিরোধী মনোভাবের ভোটারদের সমর্থন তিনি পাবেন। কিন্তু প্রচারণায় নেমে কতটা এগোতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অনেকে।

প্রচার শুরু হওয়ার আগেই হাজি সেলিম ছোট ছোট কিছু সভা–সমাবেশ ও পথসভা করেন। মোস্তাফা মহসীনের প্রচারণা এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। প্রার্থীদের কাছে প্রত্যাশার ব্যাপারে লালবাগের বাসিন্দা কামাল মোল্লা বলেন, ভোট এলেই তাঁদের পদচারণ বেড়ে যায়। সারা বছর তাঁদের খুঁজে পান না। তাই প্রার্থীদের কাছে তাঁর চাওয়ার কিছু নেই।

এবার ভোট দিতে পারা নিয়েও অনেক ভোটার সংশয় প্রকাশ করেন। হোসনী দালান এলাকার বাসিন্দা আবু হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এর আগে ভোট দিতে গিয়ে শুনলাম ভোট শেষ। কেন্দ্রের ভেতরে আর ঢুকতে পারলাম না। এবার যদি একই রকম হয়, তাহলে নির্বাচন করার দরকার নেই।’

এলাকায় হাজি সেলিমের পরিচিত বেশি হওয়ার সুবিধার পাশাপাশি প্রশাসনের সুবিধা পাবেন বলেও অনেক ভোটার মনে করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভোটার জানান, সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করছে। প্রশাসন, পুলিশ—সব তাদের অধীন। এ দেশের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা টেনে ভোটাররা জানান, পদে থেকে ভোট করলে তাঁদের কোনো কিছুতে সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে তাঁরা এও বলেন, মানুষ ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত যেতে পারলে এবং ইসির ভূমিকা সঠিক হলে ভোটাররা যাঁকে পছন্দ করবেন, তিনিই জিতে আসবেন।