ঢাকায় দুই দিনে গ্রেপ্তার বিএনপির ১১২ নেতা-কর্মী
নাশকতার পুরোনো মামলায় ঢাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে গত ২ দিনে গ্রেপ্তার ১১২ জনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। গ্রেপ্তার লোকজনকে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় হওয়া নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গ্রেপ্তার বিএনপির ১১২ জন নেতা–কর্মীর মধ্যে আজ বুধবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয় ৫১ জনকে। তাঁদের মধ্যে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুও রয়েছেন। আর গতকাল মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হয়েছিল দলটির ৬১ নেতা-কর্মীকে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয় নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনে ১৩২ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এরই মধ্যে ঢাকার বিভাগীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসে ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুস সালামসহ বিএনপির প্রার্থীদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। হয়রানি বন্ধ করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
২০১৫ সালে শেরেবাংলা নগর থানায় করা পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালত সূত্র বলছে, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ওই মামলায় রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের পরোয়ানা পেয়ে পুলিশ রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে গ্রেপ্তার করেছে। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেরেবাংলা নগর থানার এই মামলা তদন্ত করে রুহুল কুদ্দুস তালুকদারসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রুহুল কুদ্দুসের জামিন চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন শুনানি হবে।
এ ছাড়া লালবাগ থানার পুরোনো নাশকতার মামলায় বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ তাঁকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে লালবাগ থানা-পুলিশ বলেছে, বিএনপির নেতা মনিরুজ্জামান এ মামলার পলাতক আসামিদের গোপন আস্তানা চেনেন। গত ৬ নভেম্বর ইডেন কলেজের দক্ষিণ পাশের গেটের সামনে রাস্তা বন্ধ করে দেন আসামিরা। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে সেখানে দুটি ককটেলের বিস্ফারণ ঘটান। এ ঘটনার সঙ্গে আসামি মনিরুজ্জামান জড়িত। মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। আদালত রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
পল্টন থানার পুরোনো নাশকতার মামলায় যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাঁকেও আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে দেখা যায়, গ্রেপ্তার এসব আসামির স্বজনেরা দুপুরের পর থেকে আদালতের সামনে ভিড় করতে থাকেন। আদালতের সামনে প্রিজন ভ্যানে গ্রেপ্তার আসামিদের দেখে তাঁদের স্বজনদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পুলিশ, আদালত ও আইনজীবী সূত্র বলছে, ঢাকা মহানগরের আদাবর, হাতিরঝিল, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, রামপুরা, সবুজবাগ, পল্টন, শাহজাহানপুর, যাত্রাবাড়ী, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, ভাষানটেক, কাফরুল, বনানী, উত্তরখান, তুরাগ, উত্তরা পূর্ব, শাহবাগ, রমনা এবং নিউমার্কেট থানা-পুলিশ বিএনপির ৫১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে হাজির করে।