আদালতের ছুটির ফাঁদে কারাগারে থেকেই ভোট

মনোয়ার হোসেন খান
মনোয়ার হোসেন খান

উচ্চ আদালতের ছুটির ফাঁদে পড়ে গেছেন মাগুরা-১ আসনের বিএনপিদলীয় প্রার্থী মনোয়ার হোসেন খান। নাশকতার একটি মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি। ডিসেম্বর মাসজুড়ে আদালতে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় তাঁকে কারাগারে অন্তরীণ অবস্থাতেই নির্বাচন করতে হচ্ছে। তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার বলে দাবি করছেন।
২০১৫ সালের ২১ মার্চ দেশব্যাপী অবরোধ চলাকালে মাগুরার মঘির ঢাল এলাকায় ট্রাকে পেট্রলবোমা হামলায় পাঁচ বালুশ্রমিক নিহত হন। ওই ঘটনায় মনোয়ার হোসেন খানসহ বিএনপি-জামায়াতের ২৬ নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়। মামলা দায়েরের পর থেকেই মনোয়ার হোসেন দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে মাগুরা-১ আসনের মনোনয়ন নেন।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর ২৯ নভেম্বর মনোয়ার হোসেন মাগুরা জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
মামলার নকলের কপি না পাওয়ায় জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে যেতে পারছেন না তাঁর আইনজীবীরা। ডিসেম্বরজুড়ে আদালত বন্ধ থাকায় আদালত থেকে নকলের কপি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আপাতত তাঁকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।
মাগুরা জজ আদালতের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আদালতের অবকাশকালীন ছুটি ১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অন্যদিকে নভেম্বরের শেষ কর্মদিবস ছিল বৃহস্পতিবার। মাঝে শুক্র ও শনিবার ছুটি। এ কারণে আদালতের সংশ্লিষ্ট নকলখানাও বন্ধ থাকায় দায়িত্বরত ব্যক্তিরাও ছুটিতে। এ অবস্থায় নকলের কপি পেতে পুরো অবকাশকালীন সময় মনোয়ার হোসেনকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে।
অবশ্য বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তাঁদের প্রার্থী। মনোয়ার হোসেনের আইনজীবী শাহেদ হাসান বলেন, ‘আদালতে জামিন নামঞ্জুর হয়েছে দুপুর ১২টায়। আমরা বেলা ১টায় নকলের জন্য আবেদন করেছি। আদেশের কপি স্বাক্ষর হয়ে পেতে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টা লাগতে পারে।
অথচ রাজনৈতিক কারণেই টালবাহানা করে সেই দিনটি পার করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।’ তিনি আরও বলেন, আদালত ছুটিতে থাকলেও নকল শাখা থেকে মামলার নকলের কপি পরে তুলতে আইনত কোনো বাধা নেই। অতীতে এমন ঘটনার নজির রয়েছে।
তবে সরকারপক্ষের আইনজীবী কামাল হোসেন এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যেকোনো মামলার ক্ষেত্রেই নকলের কপি পেতে দুই থেকে তিন দিন লেগে যায়।
সেখানে শেষ কর্মদিবসে তিনি আদালতে হাজির হয়েছেন। বিজ্ঞ জজ রায় ঘোষণার পরপরই কাগজপত্র স্বাক্ষর করে ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু পরের দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে বার্ষিক অবকাশকালীন ছুটি শুরু।
এ কারণে নকলখানার কর্মরত ব্যক্তিরা ছুটিতে চলে গেছেন। এখানে রাজনৈতিক কোনো বিষয় নয়, বরং আসামির আইনজীবীদের দূরদর্শিতা না থাকায় মনোয়ার হোসেনকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।