পারিবারিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত ব্যাংক চায় ওয়ার্কার্স পার্টি

রাশেদ খান মেনন
রাশেদ খান মেনন

দেশের ব্যাংকব্যবস্থাকে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করতে চায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। আজ বৃহস্পতিবার দলটি ১৩ দফা লক্ষ্য ও ২১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে।

রাজধানীর তোপখানা রোডে দলীয় কার্যালয়ে ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ১৩ দফা লক্ষ্য পাঠ করে শোনান। দলটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীকে পাঁচটি আসনে এবং নিজেদের দলীয় প্রতীক হাতুড়ি নিয়ে তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন এই সরকারের বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ছিলেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির ইশতেহারের তৃতীয় দফা লক্ষ্যে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও অর্থনীতির সর্বস্তরে দুর্নীতি রোধ, ব্যাংক জালিয়াতি, অর্থ পাচার ও ঋণখেলাপি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাতকে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার কথা বলা হয়। প্রথম দুই দফায় রাজনীতিকে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের হাত থেকে রক্ষা করতে রাজনীতি ও নির্বাচনব্যবস্থার পরিপূর্ণ সংস্কার করা এবং উন্নয়নের পাশাপাশি ধনী-দরিদ্রের ও গ্রাম-শহরের বৈষম্য যৌক্তিকহারে কমিয়ে আনতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, মিথ্যা কাগজ দিয়ে ঋণ নেওয়া ইত্যাদি ঘটনা আছে। আপনারা লক্ষ করেছেন ব্যাংক জালিয়াতির কারণে ইতিমধ্যে কতগুলো গ্রুপকে যেমন বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, ডেসটিনি, হল–মার্ক—এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে এবং তারা সবাই জেলে আছেন। এ ছাড়া যেসব ব্যাংকে এসব বিষয় থাকছে, তাদের ক্ষেত্রেবিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা জোর দিতে চাই, ব্যাংকব্যবস্থার আশু পরিবর্তন করা। অর্থমন্ত্রী একটি ব্যাংক কমিশন করার কথা বলেছিলেন, যেটা এখনো হয়নি। আমরা সেই ব্যাংক কমিশন গঠন করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মেনন বলেন, এই নির্বাচনকেন্দ্রিক এখন পর্যন্ত যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে। জনগণ যখন নেমে যায়, নির্বাচন যখন উৎসবে রূপ নেয়, তখন এ ধরনের সহিংসতা নির্বাচনের পরিবেশকে খুব বেশি ক্ষতি করতে পারে না। আমি আশা করব, এই নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ হবে।’

ইশতেহারের অন্য লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বেকার ভাতা, চাকরির প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি ব্যবস্থা, মেধার ভিত্তিতে আবাসন বণ্টন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি কমানো, গবেষণাবৃত্তি, শিক্ষা খাতে জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ বরাদ্দ করা, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির অবসান করা, সংখ্যালঘু কমিশন, নারী–পুরুষের মজুরিবৈষম্য দূর করা, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা, কৃষকের অভিযোগ বিচারে কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠা করা, কম্পিউটার প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিতদের ব্যবধান, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়, সমবায় ও ব্যক্তিমালিকানার ভারসাম্য রক্ষা করা, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনাহীনতা ও ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা, বাপেক্সকে সক্ষম করা এবং পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

এ সময় ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।