বিএনপির প্রচারে নেই জামায়াত

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন ধানের শীষ প্রতীক পেয়েই নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি গণসংযোগ, কর্মিসভা, ভোটার ও কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ভোট চাইছেন। কিন্তু তাঁর নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে নেই জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।

গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নন্দীগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীর গণসংযোগের সময় জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি।

এই আসনটি ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে বিএনপির জেড আই এম মোস্তফা আলী ১ লাখ ৩১ হাজার ৪১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম মহাজোটের (জাসদ) প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম নৌকা প্রতীকে ভোট পান ৭৫ হাজার ৯৯১। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সাংসদ হন রেজাউল করিম। এবারও মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাংসদ রেজাউল করিম।

এই আসনে এবার কাহালু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির তায়েব আলী ২০-দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু জোটের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ না করায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। তায়েব আলী নাশকতার একটি মামলায় কয়েক দিন আগে আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় দীর্ঘদিন আগে থেকেই তৎপর জামায়াত। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে জেলার ১২টি উপজেলার ৬টিতে প্রার্থী দেয় জামায়াত। এর মধ্যে শেরপুর, কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বগুড়া-৪ আসনের দুটি উপজেলাতেই জামায়াতের চেয়ারম্যান থাকায় ভোটের সমীকরণও এখানে ভিন্ন। আসন্ন নির্বাচনে এখানে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই। তবু বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে মাঠেও দেখা যাচ্ছে না জামায়াতের নেতা-কর্মীদের। বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের কেউ কেউ এতে নাখোশ।

নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জামায়াত গাছেরটাও খাবে, তলারটাও কুড়াবে। জোটগতভাবে নির্বাচন করার শর্তেই তাদের বেশ কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বগুড়া বিএনপির দুর্গ। এখানে আসন চাওয়া অনেকটা মামাবাড়ির আবদারের মতো। না পেয়ে তারা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবে না, এমনটা মেনে নেওয়া যায় না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়ায় নির্বাচনের জন্য জামায়াতকে প্রচারণায় নামতে হয় না। আর ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামার জন্য কেন্দ্র থেকে এখনো কোনো নির্দেশ আসেনি। নির্দেশ এলে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।

গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট এলাকায় গণসংযোগ চালান বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে অংশ নিলেও জামায়াতের কাউকে দেখা যায়নি।

কুন্দারহাটে গণসংযোগ শেষে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে মোটরসাইকেল মহড়া দেন ধানের শীষের প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা। দুপুরের দিকে উপজেলার রনবাঘা বাজারে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তাঁরা। সেখানেও জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে প্রার্থীর সঙ্গে দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তাঁরা আদালতে হাজিরা দিতেই ব্যস্ত রয়েছেন। এ কারণে নির্বাচনী প্রচারণায় আসতে পারেননি। তবে জামায়াতের অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

কুন্দারহাটে কথা হয় উপজেলার জোবায়ের রহমান নামের এক ভোটারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই আসনে জামায়াতের কিছু ‘রিজার্ভ’ ভোট রয়েছে। নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে না থাকলে নৌকার প্রার্থী সুফল পাবেন।

একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন ভোটার আবদুর রহমান। তিনি বলেন, এখানে এবার মানুষ ভোট দিতে চায়। ভোট ঈদের মতোই বাঙালির কাছে খুশির উৎসব। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে মানুষ ভোট উৎসব উদ্‌যাপন করবে।

নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকার রিকশাচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘এই আসনে তানসেন (রেজাউল করিম) মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। কিন্তু তাঁকে অনেকেই আমরা চিনি না। আর গত পাঁচ বছরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। গতবার ভোট দিতে যাইনি। এবার ভোট দেওয়ার ইচ্ছা আছে।’

রিকশাচালক আবুল হোসেনের মতো আরও কয়েকজন ভোটারের মত, বিএনপির আমলে বগুড়ার অনেক উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু গত ১০ বছরে এই জেলার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তাই বগুড়ায় বিএনপির বিকল্প বিএনপিই। বিএনপির সময় নন্দীগ্রামে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় বিবেচনায় সেটি চালু করেনি। সেখানে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এগুলো চালু হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ সেবা পাবে।