তিন কোটিপতির লড়াই

শিবপুর বাজার। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা। বাজারের মাঝামাঝিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। নেতা-কর্মীদের নিয়ে কার্যালয়ে বসেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ খান। চলছে নির্বাচনী ক্যাম্পের জন্য টাকার বিলিবণ্টন নিয়ে মৃদু আলোচনা। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে টাকার আলোচনা থামল। এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুনুর রশীদ খান বলেন, পরিবেশ ভালো। নৌকার বিজয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

এবার আসনটি থেকে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল হক ভূঞা। তিনি ২০০৮ সালে মহজোটের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালেও নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার কাছে তিনি পরাজিত হন। এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।

আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে একটু দূরে উপজেলার ডাকবাংলো রোডে সিরাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত কার্যালয়। গতকাল সকালে সেখানে গিয়েও দেখে গেছে টাকার বণ্টন নিয়ে আলোচনা। কোন কেন্দ্রে কত টাকা গেল, তা নিয়ে শোরগোল।

শুধু কার্যালয় নয়, টাকার আলোচনা পথেঘাটেও। কলেজ গেটের চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন দুজন। কোন প্রার্থীর কত টাকা, কার কেমন ব্যবসা, ভোট টানতে কে কেমন খরচ করছেন—তাই নিয়ে আলোচনা করছেন দুজন। জানতে চাইলে একজন বলেন, এখন টাকা যাচ্ছে নেতাদের কাছে। ভোটের আগে যাবে ভোটারের কাছে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন প্রার্থীরা। এই আসনে টাকা নিয়ে এত আলোচনা কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই আসনে প্রার্থী মোট আটজন। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তিনজনের মধ্যে। এই তিনজনের প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী ও কোটিপতি।

কোটিপতি এই তিন প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের জহিরুল হক ভূঞা, বিএনপির মনজুর এলাহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (সিংহ প্রতীক) সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।

নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, জহিরুল হকের মোহনের বার্ষিক আয় প্রায় সাড়ে ২৭ লাখ টাকা। তাঁর প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার সম্পদ আছে। মনজুর এলাহীও প্রায় সমপরিমাণ টাকা বছরে আয় করেন। তিনিও প্রায় ১৩ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তবে আয়ে ও সম্পদে ঢের এগিয়ে সিরাজুল ইসলাম। তাঁর বার্ষিক আয় প্রায় ১৬ কোটি টাকা। সম্পদ আছে প্রায় ১২৮ কোটি টাকার।

স্থানীয় ভোটার শফিকুল আলম বলেন, এলাকায় গত পাঁচ বছরে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক উন্নয়ন করেছেন সিরাজুল ইসলাম। তাই ভোটে এবারও তিনি এগিয়ে থাকবেন।

তবে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন নৌকার সমর্থক চক্রদা ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিংহ (সিরাজুল ইসলাম) আর ধানের শীষে ভোট ভাগাভাগি হবে, নৌকার ভোটে কোনো ভাগ হবে না। যাঁরা নৌকার ভোটার, তাঁরা ঠিকই নৌকায় ভোট দেবেন।

আর বিএনপির সমর্থকদের দাবি, সিরাজুল ইসলাম আওয়ামী লীগের লোক। তিনি নৌকা প্রতীকেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। সেটি না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাই নৌকার ভোটেই ভাগাভাগি হবে। সুবিধায় থাকবে ধানের শীষ।

নৌকার ভোটে ভাগ হবে কি না জনতে চাইলে শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ খান বলেন, নৌকার কর্মী–সমর্থকদের স্বতন্ত্র প্রার্থী টানতে পারবেন না। কারণ, নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক।

স্বতন্ত্র প্রার্থী (বর্তমান সাংসদ) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তৃণমূলের জনগণ, খেটে খাওয়া মানুষ আমার ভরসা। আওয়ামী লীগের কট্টরপন্থী ছাড়া লিবারেল নেতা-কর্মীরাও আমার সঙ্গে আছে।’

বিজয়ের ব্যাপারে বিএনপির প্রার্থী মনজুর এলাহীও আশাবাদী। নরসিংদী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার বলেন, ‘শিবপুর বিএনপির ঘাঁটি। আওয়ামী লীগ এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারে কি না, সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।’