গ্রেপ্তার-হামলার মুখে ঐক্যফ্রন্ট প্রচারণায় আ.লীগের প্রার্থীরা

ভোটের মাঠে সরব উপস্থিতি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তাঁদের নেতা–কর্মীদের। কিন্তু বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারণা হামলার মুখে পড়ছে। নেতা–কর্মীদের অনেকে গ্রেপ্তার–হয়রানি এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এক প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই গাজীপুরের পাঁচটি আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও নেতা–কর্মীরা প্রচার–প্রচারণা শুরু করেছেন। পথসভা ও নির্বাচনী সমাবেশ, ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়ে নির্বাচনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিপরীতে বিএনপির দুই প্রার্থী প্রচারণায় নেমে হামলার মুখে পড়েছেন। গাজীপুর–৫ আসনের প্রার্থী এ কে এম ফজলুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির দুই প্রার্থী ঝটিকা প্রচারণা চালাচ্ছেন।

গাজীপুর-১
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গণসংযোগ ও নির্বাচনী জনসভা করছেন। বিএনপির প্রার্থী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর কর্মীরা মামলা আর হামলার ভয়ে গণসংযোগ ও নির্বাচনী জনসভা করছেন না।
মোজাম্মেল হকের কর্মীরা গণসংযোগে বিগত ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন। গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কর্মীরা উপজেলা ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন, প্রচারপত্র বিলি করেন। তাঁরা ভোটারদের কাছে গিয়ে নৌকার প্রচারণা চালান। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক গণসংযোগ, পথসভা ও জনসভা করছেন। তিনি শুক্রবার বিকেলে মৌচাক স্কাউটস উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মৌচাক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন।
এদিকে গত বুধবার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজারে প্রচারণায় নেমে হামলার মুখে পড়েন তানভীর আহমদে সিদ্দিকী। তাঁর কয়েকজন সমর্থক আহত হন। এরপর থেকে প্রচারণায় তাঁকে আর তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। গতকাল রোববার যোগাযোগ করা হলে তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর ছেলে ইশরাক সিদ্দিকী বলেন, ‘ওই দিনের হামলার পর বেশির ভাগ নেতা–কর্মী আতঙ্কে আছেন। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

গাজীপুর-২
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী জাহিদ আহসান বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন। পথসভা, আলোচনা সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ওই আসনের বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন সরকার প্রচারণায় নামতে পারেননি। কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ায় তিনি এত দিন প্রচারে নামেননি বলে জানা গেছে। শুক্রবার টঙ্গীর মধুমিতা এলাকায় তাঁর নিজ বাড়িতে কর্মী সমাবেশ করে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে এরপর তাঁকে আর মাঠে দেখা যায়নি। বিএনপি প্রার্থীর ব্যানার–পোস্টারও চোখে পড়ে না।

গাজীপুর-৩
এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবাল হোসেন প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার বিকেলে তিনি উপজেলার জয় নারায়ণ স্কুল মাঠে নির্বাচনী সভা করেছেন। ধানের শীষের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকীর পক্ষেও প্রচারণা চালানো হয়।
বিএনপির নেতা–কর্মীরা বলেন, পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। প্রচারণা চালানোর কারণে শুক্রবার বিকেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকীর পথসভা থেকে ফেরার পথে উপজেলা ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল আমিনকে আটক করে পুলিশ।
শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আছে। সেই অভিযোগেই তাঁকে আটক করা হয়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকী জানান, পুলিশি গ্রেপ্তার, হয়রানির কারণে নেতা–কর্মীরা আতঙ্কে আছেন। এমনভাবে গ্রেপ্তার শুরু করলে তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রম চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

গাজীপুর-৪
ওই আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি। আর বিএনপির দলীয় প্রার্থী প্রয়াত নেতা আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে সিমিন হোসেন পথসভা, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য আবারও নৌকায় ভোট চাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে গণসংযোগ ও পথসভায় যোগ দিচ্ছেন তাঁর ছোট ভাই সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমদ সোহেল তাজ।
অপরদিকে শুক্রবার বিকালে শাহ রিয়াজুল হান্নানের গাড়িবহরের হামলা চালানো হয়। এতে বিএনপির অন্তত ১০-১২ জন নেতা–কর্মী আহত হন। এরপর থেকে প্রচারণার মাঠে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি নেই।

গাজীপুর-৫
কালীগঞ্জে উঠান বৈঠক করেছেন গাজীপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। শুক্রবার পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচটি উঠান বৈঠক করেন তিনি।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী ফজলুল হককে বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জের তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকার কয়েকটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে জানায় পুলিশ। তাঁকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে ওই আসনের বিএনপির নেতা–কর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে আছেন। এখন পর্যন্ত ওই আসনে বিএনপির প্রচার–প্রচারণা শুরু হয়নি।