প্রচারণায় প্রার্থীর স্ত্রী-মেয়েরাও

কক্সবাজার-৪ আসনের উখিয়ার জালিয়াপালংয়ে গণসংযোগ করছেন বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর মেয়ে নাজিয়া জাহান চৌধুরী। গত সোমবার বিকেলে।  সংগৃহীত
কক্সবাজার-৪ আসনের উখিয়ার জালিয়াপালংয়ে গণসংযোগ করছেন বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর মেয়ে নাজিয়া জাহান চৌধুরী। গত সোমবার বিকেলে। সংগৃহীত

কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসনে প্রার্থীদের পাশাপাশি প্রচারণায় নেমেছেন স্ত্রী ও মেয়েরাও। সমান তালে করছেন উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ। নারী ভোটাররা তাঁদের কাছে পেয়ে জানাচ্ছেন ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার কথা।
নারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোসহ এলাকার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাঁরা। জেলার চারটি আসনে নারী ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮৫। জেলার চারটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের প্রার্থী আছেন ২৮ জন।
গত সোমবার বিকেলে মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের তেলীপাড়ায় নারী ভোটারদের নিয়ে উঠান বৈঠক করেন সাহেদা নাছরিন। তিনি কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের স্ত্রী। উঠান বৈঠকে সাহেদা নাছরিন গত পাঁচ বছরে মহেশখালীতে সরকারের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ নারী ভোটারদের সামনে তুলে ধরেন এবং সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকে ভোট চান। এরপর তিনি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামে গণসংযোগ করেন।
সাহেদা নাছরিন বলেন, এলাকার নারীরা পুরুষের সামনে যেতে আগ্রহী না। প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে স্ত্রীকে কাছে পাওয়ায় নারী ভোটাররা খুশি। কারণ, তাঁদের অভিযোগ ও চাওয়া-পাওয়া মন খুলে বলার সুযোগ পাচ্ছেন। আগের তুলনায় ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আশা করছেন তিনি।
মহেশখালী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিনা আক্তার বলেন, ঘরে ঘরে উঠান বেঠক করে নারী ভোটারদের সচেতন করা হচ্ছে। আগে বহু নারী ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা প্রকাশ করতেন। এখন নিজের ভোট পছন্দের প্রার্থীকে দেওয়াটা তাঁরা দায়িত্ব মনে করছেন।
এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ কারাগারে বন্দী। তাঁর অবর্তমানে কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করছেন তাঁর স্ত্রী জেবুন্নিছা চৌধুরী এবং দুই মেয়ে সুরাইয়া উলফাত ও সুরাইয়া রহমান।
কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বিরামহীনভাবে গণসংযোগ ও পথসভা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবার পক্ষে মাঠে নেমেছেন মেয়ে নাজিয়া জাহান চৌধুরী। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ১৬ ডিসেম্বর উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের রুমখাপালং ক্লাসপাড়ায় ধানের শীষের সমর্থনে পৃথক দুটি উঠান বৈঠক করেন নাজিয়া জাহান চৌধুরী। নারী ভোটারদের তিনি ইয়াবার আগ্রাসন থেকে তাঁদের সন্তানদের রক্ষা, ইয়াবা গডফাদারদের বয়কট ও নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন।
নাজিয়া জাহান চৌধুরী বলেন, তাঁর বাবা এ আসনের চারবারের নির্বাচিত সাংসদ ছিলেন। ঘরে ঘরে বাবার পরিচিতি আছে। তারপরও তিনি মাঠে নেমেছেন নারী ভোটারদের সচেতন করতে। মাদকের অপবাদ থেকে এলাকার বদনাম মুছতে, মানব পাচার রোধ, সন্ত্রাস দমনসহ এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তিনি ধানের শীষে ভোট চাইছেন।

কক্সবাজার-২ আসনের মহেশখালীর তেলীপাড়ায় উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের স্ত্রী সাহেদা নাছরিন। গত সোমবার বিকেলে।  সংগৃহীত
কক্সবাজার-২ আসনের মহেশখালীর তেলীপাড়ায় উঠান বৈঠকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের স্ত্রী সাহেদা নাছরিন। গত সোমবার বিকেলে। সংগৃহীত

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীও নারী। তিনি শাহীন আক্তার। টেকনাফের সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী। সাংসদ বদিকে সঙ্গে নিয়ে শাহীন আক্তারও দিন–রাত গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভাসমূহে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। স্বাধীনতার পর প্রথম একজন নারী প্রার্থী হিসেবে তিনি ভোটারের সহানুভূতি পাচ্ছেন। গত পাঁচ দিনে তিনি উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নে অন্তত ১৭টি পথসভা করেছেন।
কক্সবাজার-৩ ( রামু-কক্সবাজার সদর) আসনের বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজলের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। রাত-দিন সমানে তিনি নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বসে নেই তাঁর স্ত্রী শিরিন রহমানও। গত সোমবার কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ নয়াপাড়ায় নারী ভোটারদের নিয়ে একাধিক উঠান বৈঠক করেন তিনি । এরপর কয়েকটি গ্রামে গণসংযোগ চালান তিনি। আগের কয়েক দিনে তিনি রামুর গর্জনিয়া, ঈদগড়, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করেন।
শিরিন রহমান বলেন, তাঁর স্বামী এর আগেও এ আসনের সাংসদ ছিলেন। এবারও ভোটারের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে নারী ভোটারদের সংশয় রয়েছে।
একই আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল। তাঁর স্ত্রী সৈয়দা সেলিনা আক্তারও গত কয়েক দিনে রামুর গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও রাজারকুল ইউনিয়নে ১২টির বেশি উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করেছেন।
তাঁর সঙ্গে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের নারীবিষয়ক সম্পাদক মুসরাত জাহান। তিনি বলেন, আগে নারীরা কেউ কেউ পুরুষের ইচ্ছায় ভোট দিতেন। এবার তাঁরা নিজের ভোট যাঁকে খুশি তাঁকে দেবেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রমতে, আগের নির্বাচনে নারী ভোটারের উপস্থিতি ৩২ শতাংশ। এবার ৫৫ শতাংশ অতিক্রম করতে পারে। এর অন্যতম কারণ নারীদের পৃথক উঠান বৈঠক ও ঘরে ঘরে গণসংযোগ। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোও ভূমিকা রাখছে।
নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় গত ১০ বছরে নতুন ভোটার হয়েছেন ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭২ জন। তাঁদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ তরুণী। যার বেশির ভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।
কক্সবাজার পৌরসভার বাহারছড়া গ্রামে নতুন ভোটার শাউলিন সুস্মিতা মোস্তফা। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর।
শাউলিন বলেন, ভালো-মন্দ বুঝতে সক্ষম তিনি। শান্তির পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রার্থীকেই জীবনের প্রথম ভোটটি দেবেন।