রাজনীতিবিদ মাত্র একজন

একাদশ সংসদ নির্বাচন
একাদশ সংসদ নির্বাচন

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দিদারুল আলম পেশায় ব্যবসায়ী। গত নির্বাচনের সময় তাঁর সম্পদ ছিল ১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৩৫ কোটি টাকায়।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বড় দুই জোটের ৩২ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ধনী হচ্ছেন দিদারুল আলম। তাঁর মতো কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি আছে এই রকম প্রার্থী আছেন ২৫ জন। তাঁদের মধ্যে আছেন মহাজোটের ১৫ এবং ২০-দলীয় জোটের ১০ জন। এবারের নির্বাচনে দুই জোটের প্রার্থীদের ২০ জনই ব্যবসায়ী।
নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামায় দুই জোটের প্রার্থীরা ৯ ধরনের পেশার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ী আছেন ২০ জন। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আছেন তিনজন। পেশায় রাজনীতিবিদ মাত্র একজন। সমাজসেবক আছেন একজন। চিকিৎসক নির্বাচন করছেন দুজন। চাকরিজীবী, শিক্ষক, পরামর্শক ও আইনজীবী আছেন একজন করে। পেশার ঘরে প্রযোজ্য নয় উল্লেখ করেছেন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী নুরুল আলম।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব বাড়ছে। সংসদ নির্বাচনগুলোতে ধারাবাহিকভাবেই ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের দাপটের কারণে আগের মতো আইনজীবী ও চিকিৎসকদের মতো পেশাজীবীরা রাজনীতিবিমুখ হচ্ছেন— যা ভালো লক্ষণ নয়।
‘ধনী’ প্রার্থী দিদারুলের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ী ইসহাক চৌধুরীর সম্পত্তির মূল্য ১২ লাখ টাকা। দুই জোটের প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে কম ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার সম্পদ আছে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের বিএনপি প্রার্থী জসিম উদ্দিন সিকদারের। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আছে ১০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সম্পদের পরিমাণ ৯০ লাখ টাকা। মহাজোটের তিনিই একমাত্র প্রার্থী যাঁর সম্পদের পরিমাণ কোটি টাকার নিচে। তিনি পেশায় পরামর্শক। অবশ্য তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির জাফরুল ইসলাম ব্যবসায়ী। তাঁর সম্পদ আছে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকার।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের ১৪ কোটি টাকার সম্পদ আছে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী নুরুল আমিনের আছে ২৪ লাখ ১০ হাজার টাকার সম্পদ।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের প্রার্থী ব্যবসায়ী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার সম্পত্তি আছে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আজিম উল্লাহ বাহারের আছে ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকার সম্পদ।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন ব্যবসায়ী মাহফুজুর রহমান। তাঁর সম্পদ আছে সাড়ে সাত কোটি টাকা। বিএনপি প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশার একসময় ব্যবসা থাকলেও এখন তাঁর পেশা রাজনীতি ও সমাজসেবা। তাঁর সম্পদ আছে ৭০ লাখ টাকার।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী ও বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের আছে ২৮ কোটি টাকার সম্পত্তি। বিএনপি প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের ৭৮ লাখ টাকার সম্পদ আছে।
পেশায় ব্যবসা ও শিক্ষকতা উল্লেখ করা চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাছান মাহমুদের ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সম্পত্তি আছে।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে মহাজোটের মঈন উদ্দীন খান বাদল ও বিএনপির মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান—দুই ব্যবসায়ী প্রার্থীর সম্পদের দাম যথাক্রমে ২ কোটি ও দেড় কোটি টাকা। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আইনজীবী মহিবুল হাসান চৌধুরীর আছে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার সম্পদ এবং বিএনপির প্রার্থী চিকিৎসক শাহাদাত হোসেনের সম্পদের মূল্য ৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফছারুল আমীন পেশায় চিকিৎসক। তাঁর সম্পদের দাম ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। পেশায় সমাজসেবক আবদুল্লাহ আল নোমানের আছে ২৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের এম এ লতিফ ও বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী—দুজনই ব্যবসায়ী। তাঁদের সম্পদ আছে যথাক্রমে ৫ কোটি ও ৪ কোটি টাকার।
চট্টগ্রাম-১২ আসনে ও চট্টগ্রাম-১৩ আসনে দুই জোটের চার প্রার্থীর পেশা ব্যবসা। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম চৌধুরীর সম্পত্তি আছে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার। আর এলডিপির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা অলি আহমদের আছে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিক্ষক আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিনের সম্পদ আছে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী চাকরিজীবী আ ন ম শামসুল ইসলামের সম্পদ রয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার।
এই প্রসঙ্গে সংসদ বিষয়ে বিশ্লেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, রাজনীতি এখন ব্যবসা হয়ে গেছে। এটা ভয়ের কারণ। ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং আয় বাড়াতে রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছেন। হলফনামা বিশ্লেষণ করলে তার সত্যতা পাওয়া যাবে।
নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ব্যবসায়ীরা ব্যবসার কারণে সংসদে সার্বক্ষণিক সময় দিতে পারছেন না। আবার এলাকায়ও নিয়মিত থাকছেন না। ফলে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমে যাচ্ছে। এসব লক্ষণ রাজনীতির জন্য ভালো না।