আ.লীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র সাংসদের দ্বন্দ্ব ছড়াচ্ছে নির্বাচনী উত্তাপ

কাজী জাফর উল্যাহ,মজিবুর রহমান
কাজী জাফর উল্যাহ,মজিবুর রহমান

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের পরিবেশ। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থকদের বিরোধের জের ধরে পরস্পরের কার্যালয় ভাঙচুর, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। করা হচ্ছে মামলা।
ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসন ইউনিয়ন এবং কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ছাড়া সদরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসন। এ আসনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক সাংসদ কাজী জাফর উল্যাহ, বিএনপির খন্দকার ইকবাল হোসেন ওরফে সেলিম, স্বতন্ত্র সাংসদ মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আতাউর রহমান ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আবদুল হামিদ মিয়া। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাফর উল্যাহ ও স্বতন্ত্র সাংসদ মজিবুর রহমানের মধ্যে। ২০১৪ সালে জাফর উল্যাহকে হারিয়ে সাংসদ হন মজিবুর রহমান। গত পাঁচ বছর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, মারপিট, ভাঙচুর লেগেই আছে। ওই রাতে ভাঙ্গার কাউলিবেড়ার লোচনগঞ্জ ও খাটরা গ্রামে, আজিমপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামে এবং কালামৃধা ইউনিয়নের সাওসার গ্রামে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র সাংসদের পাঁচটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। লোচনগঞ্জে সংঘর্ষে আহত হন পাঁচজন। ১৪ ডিসেম্বর ঘারুয়া ইউনিয়নের রাজেশ্বরদী গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন আহত হন। পুলিশ গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই দিন বিকেলে ঘারুয়া ইউনিয়নের খামিনার বাগ গ্রামে সাংসদের গাড়িবহর থেকে সমর্থকদের হামলায় আহত হন এ আসনের সাবেক সাংসদ লুৎফর রহমানের (ফারুক) ভাই আবদুল জামাল ভূঁইয়া (টিপু)। আবদুল জামাল বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ভাঙ্গা থানায়। ওই দিনই একই গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমানের ছোট ভাইয়ের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থকেরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই দিন সন্ধ্যায় এ ঘটনার বিচার দাবি করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এবং ভাঙ্গা পৌরসভার সামনে ঢাকা-খুলনা মহা সড়ক অবরোধ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র সাংসদের ২৪ জন সমর্থকের নাম উল্লেখ করে ভাঙ্গা থানায় মামলা করেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনূর।
হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ১৬ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থক ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক ব্যাপারীকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থকেরা সদরপুর থানা ঘেরাও, ভাঙ্গার পুখুরিয়া ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ও পুলিয়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানকে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থক ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে কখনোই সংঘর্ষে লিপ্ত হইনি। প্রতিপক্ষ হামলা করেছে। আমরা প্রতিরোধ করতে বাধ্য হয়েছি। সাংসদ সব সময় ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিচ্ছেন।’
কাজী জাফর উল্যাহর সমর্থক ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, প্রতিটি হামলার ঘটনা শুরু করছেন স্বতন্ত্র সাংসদের সমর্থকেরা। গতবার মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচনে জিতেছিলেন মজিবুর। এখন মানুষ ভুল বুঝতে পেরেছে। এলাকার মানুষ নৌকার পক্ষে রয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ফরিদপুর-৪ আসনের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ কারণে সেখানে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, ওই এলাকার পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।’