মহাজোটের প্রার্থী দাবি করে প্রচারে সাংসদ জিয়াউল

সাংসদ জিয়াউল হকের পোস্টার।
সাংসদ জিয়াউল হকের পোস্টার।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক এ আসনে বর্তমান সাংসদ। তিনি এবার দলীয় মনোনয়নর পাননি। এ আসনে তাঁর জামাতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রেজাউল দলীয় প্রার্থী হিসেবে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু দুজনই নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী পরিচয় দিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ ঘটনায় জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতির সরাইল সদর ইউনিয়ন শাখার সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম গতকাল নির্বাচনী তদন্ত কমিটি-১০১-এর দায়িত্বে থাকা জেলা যুগ্ম ও দায়রা জজের আদালতে ওই অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে জিয়াউল হক নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করে জোটের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত পোস্টার লাগানোসহ নির্বাচনী এলাকায় মাইকিং করছেন। এ আসনে রেজাউল ইসলাম জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। আর জিয়াউল হক পেয়েছেন সিংহ প্রতীক। পরে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল বা নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন জিয়াউল। আদালত তা খারিজ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু জিয়াউল অন্যায় ও নিয়মবহির্ভূতভাবে নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি করে প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ছবিসংবলিত পোস্টার করে প্রচার করছেন, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। জনপ্রতিনিধি আইনের বিধান অনুযায়ী কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী দলীয় প্রধান বা জোট, মহাজোটের নেতা-কর্মীদের ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। জিয়াউল যেন নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী দাবি না করেন এবং মহাজোটের নেতার ছবি ব্যবহার না করেন, অভিযোগে এর প্রতিকারের আবেদন জানানো হয়। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও আবেদন জানানো হয়েছে।
জিয়াউল হক মৃধা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি একই দল থেকে সাংসদ হন। সেবার রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পান। তবে পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এবার তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পান।
জাতীয় পার্টি ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সই করা মনোনয়নপত্র নিয়ে নির্বাচন কমিশনে জমা দেন রেজাউল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন জিয়াউল। ৯ ডিসেম্বর প্রত্যাহারের শেষ দিন জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র এনে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়ে লাঙ্গল প্রতীকের জন্য আবেদন করেন জিয়াউল। জিয়াউলকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে ১০ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দেন মসিউর। তবে রেজাউলকে দলীয় হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হায়াত-উদ-দৌলা খান। আর জিয়াউল স্বতন্ত্র হিসেবে সিংহ প্রতীক পান। এরপরও জিয়াউল মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আশরাফ উদ্দিন বলেন, একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী কোনোভাবেই দলীয় নেতার ছবি ও প্রতীক ব্যবহার করতে পারেন না।