'নিশ্চুপ' জামায়াত, নানা আলোচনা

হাফিজ আহমদ মজুমদার, উবায়দুল্লাহ ফারুক
হাফিজ আহমদ মজুমদার, উবায়দুল্লাহ ফারুক

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্ট তথা ২৩-দলীয় জোটের প্রার্থী নিয়ে শক্ত টানাপোড়েন চলছে। এখানে মহাজোটে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) পৃথক দুজন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। ২০-দলীয় জোট থেকে শেষ মুহূর্তে জামায়াতকে বাদ দিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের প্রার্থীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। ফলে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত অনেকটা গুটিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় দুটি জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যেই প্রার্থীদের জয় নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। হার–জিতে জামায়াতের ভোট ‘ডিসাইডিং ফ্যাক্টর’ হবে—এমন সমীকরণেও চলছে আলোচনা।
ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন জাপার কেন্দ্রীয় নেতা সেলিম উদ্দিন। আসনটির তৎকালীন সাংসদ আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার দলের মনোনয়ন চাননি। এবার হাফিজ মনোনয়ন চেয়ে দলের চূড়ান্ত মনোনয়নও পান। তবে বেঁকে বসে জাপা। মহাজোটের শরিক দলটি সেলিমকে পুনরায় আসনটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা চালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মহাজোট এ আসনটি উন্মুক্ত করে দেয়। এ অবস্থায় উভয় দলের প্রার্থীই এখানে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
একই সূত্র জানায়, এখানে ১৯৮৬ সাল থেকেই নির্বাচন করে আসছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা ফরীদ উদ্দিন চৌধুরী। ২০০১ সালে তিনি চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদারকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি জোটের মনোনয়ন পেলেও পরাজিত হন। এবারও প্রত্যাশা ছিল তিনি জোট তথা ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখানে ঐক্যফ্রন্টের চূড়ান্ত মনোনয়ন পান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি উবায়দুল্লাহ ফারুক।
স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩১২। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভোটই বিভিন্ন ইসলামী দলের। বাদবাকি ভোট আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের। তবে অন্য ইসলামী দলকে ঠেকাতে অপর ইসলামী দলের ভোটও অনেক সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বাক্সে পড়ে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
২০–দলীয় জোটের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, জামায়াত এখনো ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে নামেনি। তাদের গতিবিধিও ঠিকভাবে বোঝাও যাচ্ছে না। জানতে চাইলে জামায়াতের সাবেক সাংসদ ফরীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ ২৩-দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন কি না, এ প্রশ্নেরও কোনো উত্তর দিতে চাননি তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রার্থী এখানে থাকায় আমার কোনো সমস্যা হবে না। এ আসনে আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এলাকার প্রতিটি মানুষের সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক রয়েছে। এটি আমার বিজয় নিশ্চিত করবে।’ জামায়াতের ভোট আওয়ামী লীগের বাক্সে পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সেটি হবে না। আর সেটি হওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।’
স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগে বিএনপি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম যৌথভাবে সভা করে এ আসনে জামায়াতের কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। জামায়াত ছাড়া বিএনপি অথবা জমিয়তের কোনো প্রার্থী এখানে দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলেও জানিয়েছিলেন। ফলে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণার পর স্থানীয় বিএনপি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীর জন্য কাজ করছে।
জমিয়তে উলামায়ের জকিগঞ্জ শাখার সেক্রেটারি বিলাল আহমেদ ইমরান বলেন, ‘আমরা যেখানেই যাচ্ছি, ধারণার চেয়েও বেশি সাড়া পাচ্ছি। তবে জামায়াত এখনো আমাদের পক্ষে মাঠে নামেনি। বিষয়টি এখনো ক্লিয়ার করে বলতে পারছি না। তবে আমরা আশা করি, একটা সময় এসে তারা ঠিকই ফিল্ডে নামবে। এ ছাড়া তাদের ভোটও আমাদের বাক্সেই পড়বে।’