পাল্টাপাল্টি অভিযোগে সরব আ.লীগ-বিএনপির প্রার্থীরা

এ কে আবদুল মোমেন, খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর
এ কে আবদুল মোমেন, খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর

উন্নয়ন নিয়ে বাগ্‌যুদ্ধের পর এবার সিলেট-১ (মহানগর ও সদর) আসনের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ শুরু করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন অভিযোগ করেছেন, বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা এনে নির্বাচনে কাজে লাগাচ্ছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির প্রার্থী বলছেন, ভুয়া অভিযোগ উত্থাপন করে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গতকাল সকালে নগরের কাইস্তোপখানা, কাজিরবাজার এলাকায় গণসংযোগ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করেন এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপির প্রার্থী মুক্তাদীর পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা এনে নির্বাচনের কাজে লাগাচ্ছেন।
রাতের আঁধারে নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে অভিযোগ করে আবদুল মোমেন বলেন, ‘২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফরকে ঘিরে মানুষের মনে প্রবল উৎসাহ রয়েছে। তাঁর এই সফরের মধ্য দিয়ে সিলেটে নৌকার জোয়ার আরও বেগবান হবে।’
দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরের করিমউল্লাহ মার্কেট ও আগপাড়া, বেলা সাড়ে তিনটায় পাঠানটুলায় উঠান বৈঠক ও পথসভা করেন এ কে মোমেন। গণসংযোকালে তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির প্রার্থী সম্পর্কে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গতকাল দুপুরে মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী তাঁর হলফনামাতেই উল্লেখ করেছেন তিনি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান লিমিটেড থেকে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৭ টাকা নিয়েছেন। সে টাকাই তিনি নির্বাচনে ব্যয় করছেন বলে আমি অভিযোগ করেছি। আপনারা হলফনামায় সেটা দেখতে পাবেন।’
হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, খন্দকার মুক্তাদীর ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান লিমিটেড থেকে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৭ টাকার একটি একক ঋণ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খন্দকার মুক্তাদীর বলেন, ‘সারা দেশে বিএনপির প্রার্থীদের হামলা-লাঞ্ছনা করে নার্ভাসনেস পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। ভুয়া কিছু অভিযোগ উত্থাপন করে একই পথের পথিক হলেন মোমেন সাহেব। আমি ব্যবসায়িক কাজে বিভিন্ন ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছি। এটাকে তিনি সম্পূর্ণ অন্য একটি খাতে নিয়ে যেতে চাইছেন।’ মুক্তাদীর বলেন, ‘এখন মৌখিক আক্রমণ করেছেন, পরে হয়তো শারীরিক আক্রমণও করা হবে। তবে মাঠে আছি, মাঠেই থাকব। জয় নিয়েই ঘরে ফিরব।’
খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর সকালে সিলেট সদর উপজেলার খালিরগাঁও এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি নানা অভিযোগ ভোটারদের শোনাচ্ছিলেন। মুক্তাদীর বলেন, আওয়ামী লীগ পোস্টার ছেঁড়ার যে অভিযোগ করছে, সেটা সত্য নয়। বরং আওয়ামী লীগের কর্মীরাই ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি করছেন। এরপর তিনি সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের মানসীনগর গ্রামে উঠান বৈঠকে যোগ দেন।
উঠান বৈঠকে বিএনপির প্রার্থী বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের কথা বলে জাতিকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের ভয়াল থাবা থেকে বাদ যায়নি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তারা ঘরে ঘরে কোটি কোটি যুবককে বেকার করে দিয়েছে। নায্য দাবি চাইতে গেলে তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারের নির্মম হাতুড়িপেটা জাতি কখনো ভুলবে না।
উঠান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়ন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারা মিয়া। বিএনপি নেতা জঈনুদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী, সহসভাপতি এ কে এম তারেক কালাম, মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস সালাম বাচ্চু, স্বাস্থ্য সম্পাদক আশরাফ আলী প্রমুখ।

অন্যদের প্রচারণা
গতকালও সিলেটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে দিনভর। তাতেও থেমে ছিল না প্রার্থীদের প্রচারণা। বেলা ১১টা থেকে নগরের মহাজনপট্টি, জেলরোড, করিমউল্লাহ মার্কেট ও বন্দরবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা রেদওয়ানুল হক চৌধুরী রাজু। এ সময় তিনি বলেন, ‘ইসলাম, দেশ ও মানবতার স্বার্থে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সবাইকে হাতপাখা মার্কায় ভোট দেওয়া উচিত।’ বাসদের (মার্ক্সবাদী) প্রার্থী উজ্জল রায় গতকাল সকাল আটটায় সিলেট সদর উপজেলার মালনীছড়া চা-বাগান এলাকা এবং দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও দরগাগেট এলাকায় গণসংযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, সরকার সমস্ত নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।’
বাংলদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রণব জ্যোতি পাল তাঁর মই প্রতীকের সমর্থনে গতকাল বেলা দুইটা থেকে নগরের আম্বরখানা, দত্তপাড়া, চৌকিদেখি, মজুমদারি ও লিচুবাগান এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সুস্থধারার রাজনীতি চালু করতে চাই। হাতে গোনা মানুষ নয়, সব মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন করতেই আমি প্রার্থী হয়েছি।’
সিলেট-১ আসনের অপর প্রার্থীদের সমর্থনে মাইকিং ও প্রচার-প্রচারণাও অব্যাহত রয়েছে। এ আসনের অপর প্রার্থীরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী (লাঙ্গল), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের আনোয়ার উদ্দিন বোরহানাবাদী (হারিকেন), ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) মুহম্মদ ফয়জুল হক (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ (আম) ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা নাসির উদ্দিন (বটগাছ)।