বিদেশিদের বড় অংশের আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা

>

• পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি
• গতকাল পর্যন্ত অনুমতি পেয়েছেন ৬ জন
• সবাই আসতে পারবেন কি না, সন্দিহান

অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতির কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বিদেশিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের বাংলাদেশে আসা নিশ্চিত হয়নি। আর দেশি পর্যবেক্ষকদের ‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে’ ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের কথা বলেছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। এমন পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা কতটা সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গত এক সপ্তাহে একাধিক পশ্চিমা কূটনৈতিক সূত্রে যোগাযোগ করে এমন অনিশ্চয়তার কথা জানা গেছে। সূত্রগুলো বলছে, ওয়াশিংটনভিত্তিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) হয়ে ব্যাংককভিত্তিক সংস্থা দ্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনের (এনফ্রেল) ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কথা। গতকাল রাতে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে ছয়জনের আসার ব্যাপারে অনুমতি পাওয়া গেছে। বাকিদের বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় সবাই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান এনডিআই।

এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে যে বিদেশি নাগরিকদের আসার কথা, তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরও ৩২ সদস্য রয়েছেন।

এনফ্রেলের সদস্যদের আসার অনুমতির ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সাধারণত নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বাংলাদেশে আসার বিষয়ে অনুমতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে ইসি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে থাকে। দুই মন্ত্রণালয় বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সফরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

এনডিআইয়ের একটি প্রতিনিধিদল এ মাসের শুরুতে ঢাকা সফর করে। এ সময় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এই প্রতিবেদককে জানান, শেষ মুহূর্তে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও আর্থিক ও প্রস্তুতিগত কিছু সমস্যা আছে। তাই এনডিআই খুব দ্রুত এবং সীমিত তহবিলের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের কাজটি সম্পন্ন করতে এনফ্রেলকে যুক্ত করেছে। বাংলাদেশ সফরের সময় এনডিআই প্রতিনিধিদলটি সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠকে এনফ্রেলকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে অনুরোধ জানিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনডিআইয়ের একজন পরামর্শক গত বুধবার প্রথম আলোকে জানান, এনফ্রেলের ৩২ সদস্যের সবাই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে পারবেন কি না, সেটা এখনো অজানা। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় তাঁরা আসলেই সুচারুভাবে কাজ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, শেষ মুহূর্তে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এক-দুই দিনের কাজ নয়। একটু আগেভাগেই শুরু করতে হয়। সে ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁরা এখনো আসার অনুমতি না পেলে কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা এবার সীমিত আকারে আসায় যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন-সহযোগীরা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ জন্য ইডব্লিউজিকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরের ছবি তুলতে পারবেন না। ভিডিও করতে পারবেন না। পর্যবেক্ষণের সময় গণমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়া যাবে না।

ইসি সূত্র জানায়, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বাইরে দেশি ৮১টি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইসিতে আবেদন করেছে। এসব সংস্থার পক্ষ থেকে মোট ৩৪ হাজার ৬৭১ জন পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকতে চান। এ সংখ্যা কমে ২৫ হাজার ৯০০ বা আরও কম হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তবে নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, এমন কর্মকাণ্ড ঘটালে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। তবে ২০১৭ সালে ইসি প্রণীত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় এমন কোনো নির্দেশনা নেই যে পর্যবেক্ষকেরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ছবি তুলতে পারবেন না। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ তো বলেই দিয়েছেন, দেশি পর্যবেক্ষকদের ‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে’ থাকতে হবে।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রতি ইসির এমন নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাশ্চাত্যের কয়েকজন কূটনীতিক সম্প্রতি এই প্রতিবেদককে বলেছেন, এ ধরনের নির্দেশনা পর্যবেক্ষকদের অবারিতভাবে কাজের ক্ষেত্রে বড় বাধা। পর্যবেক্ষকদের কাজই হচ্ছে নির্বাচন কেন্দ্রের পরিস্থিতি সুচারুভাবে দেখে তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন করা। সেখানে তাঁদের হাত-পা বেঁধে দিলে পর্যবেক্ষকদের পক্ষে তো স্বাধীনভাবে কাজ করা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক গোলটেবিল বৈঠকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে পর্যবেক্ষকদের প্রতি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তা সবার মনে সংশয় জাগিয়েছে। এসব বিধিনিষেধ আরোপের মধ্য দিয়ে ইসির আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি স্পষ্ট হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইসি অস্বচ্ছতার জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে।

দেশি পর্যবেক্ষকদের কাজের পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাজের জন্য পারিপার্শ্বিক পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যমান পরিবেশ যদি সহায়ক না হয়, তাঁদের পক্ষে সুচারুভাবে কাজ করা সম্ভব নয়।