আ.লীগে যোগদানের হিড়িক

নির্বাচন সামনে রেখে রাজশাহীর প্রতিটি আসনেই বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়ে গেছে। তফসিল ঘোষণার পরই রাজশাহীর ছয়টি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের পবায় বিএনপি থেকে একজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হাজারখানেক নেতা-কর্মী ও পাঁচজন ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

যোগদানকারী নেতা-কর্মীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তাঁরা আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন।

শুক্রবার বিকেলে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের আশরাফের মোড়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের হাতে ফুলের নৌকা তুলে দিয়ে ওই ইউপির চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি পবা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তাঁর সঙ্গে ওই ইউপির সদস্য ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা সদস্য রেশমা বেগম এবং রাশেদা বেগম আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াছিন আলী, সাধারণ সম্পাদক জেবর আলী, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ওমর ফারুক ফারদিন।

ইউপি চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘একদিকে দেশের উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীতে তৃণমূলে পর্যাপ্ত অনুদান এবং শেখ হাসিনার সময়োপযোগী পদক্ষেপ আমার ভালো লেগেছে। আমি বিশ্বাস করি, আবারও নৌকা প্রতীক বিজয়ী হবে এবং দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। অপরদিকে আমাদের মতো অনেক নেতা-কর্মীকে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ খুনের অপবাদ শুনতে হয়। আমার এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের সেবা ও অধিকার নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি।’

যোগদানের পর মফিদুল ইসলাম মোটরসাইকেলের বিশাল বহর নিয়ে ওই আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আয়েন উদ্দিনের পক্ষে হরিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের চারঘাটে গত দুই দিনে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। ৯ ডিসেম্বর চারঘাট উপজেলার ফরহাত আলাউদ্দিন মডেল স্কুলে ৩৫০ জন নেতা-কর্মী বিএনপি, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এতে নেতৃত্ব দেন শলুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি তৌফিক ইসলাম, চারঘাট পৌর বিএনপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি শফিউর রহমান, যুবদলের নেতা জাহিদুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুল কাদের ও ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আবদুল মান্নান।

ওই যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্‌রিয়ার আলম। যোগদানকারী ব্যক্তিরা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম। ১৯ ডিসেম্বর চারঘাট উপজেলার রাওথা ও পরানপুর গ্রামে চারঘাট ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কাবিল উদ্দিনের নেতৃত্বে ও বিএনপি নেতা আহসান আলীর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে ১৪ ডিসেম্বর রাতে পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির শতাধিক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ওই ইউপির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেন ফুলের মালা পরিয়ে তাঁদের যোগদান করান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতারা। ১৬ ডিসেম্বর উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইমরুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তাঁকে মিষ্টি খাইয়ে যোগদান করান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে গত ১০, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর এই তিন দিনে তানোর উপজেলার কলমা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি লুৎফুল হায়দার রশিদের হাতে হাত দিয়ে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এখানে ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতা আব্বাস উদ্দিন, আতাউর রহমান ও রেজাউল করিমের নেতৃত্বে কর্মী–সমর্থকেরা যোগদান করেন।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ১৬ নভেম্বর বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের হাত থেকে ফুলের নৌকা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। যোগদানকারী ব্যক্তিরা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের নীতি, আদর্শ এবং গঠনতন্ত্র মেনে দলের একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

ওই যোগদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘যখনই নির্বাচন আসে, তখনই একটি চক্র ষড়যন্ত্র করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এসব ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে।’