আনিসুলের 'উন্নয়ন', ইবরাহিমের 'গণতন্ত্র'

আনিসুল ইসলাম ও মুহাম্মদ ইবরাহিম
আনিসুল ইসলাম ও মুহাম্মদ ইবরাহিম

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী ও সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত) আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। টানা ১০ বছরসহ ১৯ বছর এই আসনের সাংসদ তিনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের প্রতীক ধানের শীষ।

এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩০ হাজার ১২৪ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৪০টি।

গত শুক্রবার সকালে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদে আর সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে দক্ষিণ মাদার্শায় প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। আলাপকালে দুজনই সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বললেন। নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান আনিসুল ইসলাম। অপর দিকে ইবরাহিমের চাওয়া—জবরদস্তি নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।

প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বিএনপি–জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটে অংশ নেওয়ায় কষ্ট পেয়েছেন বলে জানালেন আনিসুল ইসলাম। ‘ছাত্রজীবনে একই ক্যাডেট কলেজে পড়েছি দুজন। যারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের পক্ষে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার লড়া দুঃখের বিষয়’, বললেন তিনি।

আনিসুল ইসলাম মনে করেন, ১০ বছরে হাটহাজারীসহ দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অন্য দেশের জন্য মডেল। এলাকার রাস্তাঘাট, হালদা বেড়িবাঁধ, অক্সিজেন-হাটহাজারী সড়ক প্রশস্তকরণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে।

তাঁর মতে, গত ১০ বছরে শান্তিতে ছিল হাটহাজারীর মানুষ। শান্তির জন্য তাঁরা আবার মহাজোট সরকারকে বিজয়ী করবেন।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাটহাজারীতে। এখানে অর্ধশত কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। কওমি সনদের স্বীকৃতির কারণে এবার কওমি ভোট ব্যাংক মহাজোটের ঘরে যাবে কি না প্রশ্নের জবাবে আনিসুল ইসলাম বলেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা এ দেশেরই মানুষ। এত দিন তারা অবহেলিত ছিল। শেখ হাসিনা সনদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করেছেন। ভোটের রাজনীতির জন্য এগুলো করেননি। কেউ খুশি হয়ে ভোট দিলে তাদের বিষয়।

অপর দিকে আলাপকালে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, প্রতিদিনই বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুলিশ ধরে মিথ্যা মামলায় চালান দিচ্ছে। অনেককে বাড়ি থেকে বের না হতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে মাদার্শা বদিউল আলম হাটে প্রচারণা শেষে ফেরার পথে বিএনপির কর্মী মো. ফয়সাল, মো. ইসা, মো. ফোরকানের ওপর কে বা কারা হামলা চালায়। এভাবে প্রতিদিনই হাটহাজারীর কোথাও না–কোথাও হামলা ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে ছিপাতলী এলাকায়ও হামলা ও পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশি ধরপাকড় বন্ধ, কর্মীদের ওপর হামলা বন্ধের জন্য সাংসদ আনিসুল ইসলামের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানালেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। তিনি বলেন, উল্টো আনিস সাহেব আচরণবিধি লঙ্ঘন করে পুলিশি পাহারায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, মামলা থাকায় কয়েকজন নেতা-কর্মীকে পুলিশ ধরেছে। গণহারে কাউকে ধরা হচ্ছে না। প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন না বলে জানান তিনি।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বিএনপি জামায়াত জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন, আনিসুল ইসলামের এ বক্তব্যের জবাবে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘জামায়াত নামে তো কোনো রাজনৈতিক দল নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে লড়ছি ধানের শীষ প্রতীকে। আনিসুল ইসলামও প্রথম সাংসদ হয়েছিলেন ধানের শীষ প্রতীকে।’

৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে করতে মহাজোট জবরদস্তি করছে বলে অভিযোগ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, জবরদস্তি দেখিয়ে মহাজোট একতরফাভাবে আবার ক্ষমতা দখল করতে চায়। হাটহাজারী আসনটিও ব্যতিক্রম নয়।