নির্বাচনী প্রচারণায় নেই অর্ধেকের বেশি প্রার্থী

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনে ১৩২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের জোট ও প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির জোট, বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং হাতে গোনা কয়েকটি দল ছাড়া বেশির ভাগ দলের প্রার্থীই নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় নন। ভোটাররা এসব প্রার্থীকে চেনেন না। তাঁদের অনেকে বলছেন, তাঁরা নামেই প্রার্থী।

ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসন হলো ঢাকা-৪ থেকে ঢাকা–১৮ পর্যন্ত। এসব আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৩টিতে দলীয় প্রার্থী (নৌকা) দিয়ে দুটি আসন জাতীয় পার্টিকে (লাঙ্গল) ছেড়ে দিয়েছে। আর বিএনপি ১০টি আসন রেখে বাকি ৫টি আসন জামায়াতকে ১টি, বিজেপিকে ১টি ও ঐক্যফ্রন্টকে ৩টি আসন ছেড়ে দিয়েছে (সব ধানের শীষ)। এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (হাতপাখা) সব কটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট ৯টি আসনে (কোদাল, কাস্তে, মই), ১১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি—এনপিপি (আম)। ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট—বিএনএফ (টেলিভিশন) ও জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) প্রার্থী দিয়েছে ৮টি আসনে।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, তুলনামূলক ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের প্রচারই বেশি। পাড়া–মহল্লায় তাঁদের পোস্টার ঝুলছে, মাইকে প্রচার ও সভা–সমাবেশ চলছে। কয়েকটি এলাকায় বিএনপি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় পার্টির কিছু কিছু পোস্টার দেখা গেছে। এসব প্রতীকের প্রার্থীরা প্রধানত গণসংযোগ করছেন। তবে প্রায়ই তাঁদের অনেকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। সে কারণে ভোটের মাঠে তাঁদের খুব বেশি সোচ্চার দেখা যাচ্ছে না। এর বাইরে অন্যান্য ছোট দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে যেসব প্রার্থী আছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ৭৩ জনকে ভোটের যুদ্ধে মাঠে তেমন দেখা যাচ্ছে না।

 প্রচারে না থাকা প্রার্থীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে তাঁদের পোস্টার ছিঁড়ে গেছে, পরে আর লাগানো হয়নি। অনেকে বলছেন, তাঁরা মসজিদে মসজিদে প্রচার চালাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, তাঁরা মাঝেমধ্যে মাইকে প্রচার করছেন। কিন্তু ভোটাররা তাঁদের দেখা পাচ্ছেন না।

ঢাকা–৭ আসনের ভোটার ব্যবসায়ী মাহাবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় দলের মধ্যে নৌকার পোস্টারের পাশাপাশি হাতপাখার পোস্টার এলাকায় দেখেছি। কিন্তু অন্য কোনো প্রার্থীকে প্রচারে দেখিনি। অনেকের প্রচার নেই, মনে হয় নামমাত্রই প্রার্থী।’ 

মহানগরের আসনগুলোতে নিষ্ক্রিয় প্রার্থীদের মধ্যে আছেন কুলা মার্কায় ঢাকা-৪ আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী কবির হোসেন, ঢাকা-১৪ ও ১৫ এইচ এম গোলাম রেজা, ঢাকা-১৭ লে. কর্নেল (অব.) এ কে এম সাইফুর রশিদ। মিনার প্রতীকে ঢাকা-৪ ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী শাহ আলম, ঢাকা-৫ আবদুল কাইয়ুম, ঢাকা-৮ আসনে আবু নোমান মোহাম্মদ। মশাল প্রতীকে ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হাবিবুর রহমান।

মাছ প্রতীকে ঢাকা-৪ আসনে গণফ্রন্টের সহিদুল ইসলাম মোল্যা, ঢাকা-৫ শামীম মিয়া, ঢাকা-৬  আহম্মেদ আলী শেখ, ঢাকা-৭ রিয়াজ উদ্দিন, ঢাকা-৮ জাকির হোসেন।

 আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ঢাকা-৪ আসনে সুমন কুমার রায়, ঢাকা-৫ আরিফুর রহমান, ঢাকা-৬ আকতার হোসেন, ঢাকা-৭ মাসুদ পাশা, ঢাকা-৮ ছাবের আহাম্মদ, ঢাকা-৯ মাহফুজা আক্তার, ঢাকা-১০ কে এম শামসুল আলম, ঢাকা-১১ মিজানুর রহমান, ঢাকা-১২ শাহীন খান, ঢাকা-১৬ ফরিদ উদ্দিন শেখ, ঢাকা-১৮ মাসুম বিল্লাহ।

  উদীয়মান সূর্য প্রতীকে ঢাকা-৫ আসনে গণফোরামের এস এম আলতাফ হোসেন, ঢাকা-১১ মোজাম্মেল হক।

লাঙ্গল প্রতীকে ঢাকা-৫ আসনে জাতীয় পার্টির মীর আবদুস সবুর, ঢাকা-৭ তারেক আহমেদ আদেল, ঢাকা-৮ ইউনুছ আলী আকন, ঢাকা-১০ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা-১১ এস এম ফয়সাল চিশতী, ঢাকা-১২ নাসির উদ্দিন সরকার, ঢাকা-১৩ শফিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৪ মোস্তাকুর রহমান ও ঢাকা-১৫ সামসুল হক।

 কুঁড়েঘর প্রতীকে ঢাকা-৫ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) আবদুর রশীদ ও ঢাকা-৮ সুমি আক্তার।

হারিকেন প্রতীকে ঢাকা-৭ আসনে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের আলতাফ হোসেন মোল্লা, ঢাকা-৮ আসনে হাসিনা হোসেন, ঢাকা-৯ আসনে মো. আ. মোতালেব, ঢাকা-১১ আসনে শরীফ মো. মিরাজ হোসাইন ও ঢাকা-১৮ আসনে রেজাউল ইসলাম।

 টেলিভিশন প্রতীকে ঢাকা-৭ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা-৮ আবদুস সামাদ, ঢাকা-৯ শফি উল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা-১৩  দুলাল কান্তি, ঢাকা-১৪ আনোয়ার হোসেন, ঢাকা-১৫ এস এম ইসলাম, ঢাকা-১৭ আসনে এস এম আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা-১৮ আসনে আতিকুর রহমান।

 বটগাছ প্রতীকে ঢাকা-৭ আসন থেকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের হাবিবুল্লাহ। বাইসাইকেল প্রতীকে ঢাকা-৭ আসনে জাতীয় পার্টি-জেপির সৈয়দ নাজমুল হুদা।

 বাঘ প্রতীকে ঢাকা-৮ আসন থেকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিবি) আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা-১০ বাহরানে সুলতান, ঢাকা-১৩ জিয়াদুল করিম, ঢাকা-১৫ সামছুল আলম চৌধুরী, ঢাকা-১৭  আলী হায়দার ও ঢাকা-১৮ রফিকুল ইসলাম।

মোমবাতি প্রতীকে ঢাকা-১৩ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের আবদুল হাকিম ও ঢাকা-১৮ আবদুল মোমেন।

 ফুলের মালা প্রতীকে ঢাকা-১৩ আসনে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের কামরুল আহসান।

 কাঁঠাল প্রতীকে ঢাকা-১৫ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম। দালান প্রতীকে ঢাকা-১৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহিম।

 গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির ঢাকা-৪ আসনে আজাদ মাহামুদ, ঢাকা-৫ রবিউল ইসলাম, ঢাকা-৭ বিপ্লব চন্দ্র বণিক ও ঢাকা-৮ আসনে নজরুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, ঢাকা-১৪  জাকির হোসেন, ঢাকা-১৫  আবদুল মান্নান মিয়া, ঢাকা-১৬ আলী আহমেদ ও ঢাকা-১৭ কাজী মো. রাশিদুল হাসান।

এঁদের মধ্যে ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভুলবশত তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ঢাকা-১৫ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী এস এম ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ছোট দল, তাই বেশি পোস্টার করিনি। যা লাগানো হয়েছিল, তার সব বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এক দিন বিরতি দিয়ে মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে।’

একটা গুমট পরিস্থিতি বিরাজ করছে দাবি করে ঢাকা-৮ আসনে গণফ্রন্টের প্রার্থী জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পোস্টার লাগানো হলেও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সুযোগ পেলে বিএনপিও তাদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে। ১৯৯১ সালে জাগদল থেকে এই আসনে নির্বাচন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দল করি, তাই নির্বাচনে দাঁড়াতে হয়।’