মাঠে ব্যস্ত মেনন, কৌশল প্রণয়নে আব্বাস

রাশেদ খান মেনন ও মির্জা আব্বাস
রাশেদ খান মেনন ও মির্জা আব্বাস

প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। অন্যদিকে গত তিন দিন গণসংযোগে অনুপস্থিত এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি ব্যস্ত নির্বাচনী কৌশল প্রণয়ন নিয়ে।

এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়ে ভোটারদের প্রত্যাশা অনেক। তবে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের পরিবেশ নিয়ে কারও কারও মধ্যে আছে শঙ্কাও।

কয়েক দিন ধরে ঢাকা-৮ আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র নৌকার পোস্টার ঝুলছে। অলিগলিতে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্পে বাজছে নির্বাচনী গান। আর ধানের শীষের প্রার্থীর কিছু পোস্টার ঝুলছে কেবল মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসার সামনে। আব্বাসের বাসায় বেশ কয়েকটি কক্ষে গতকাল থেকে বিরামহীনভাবে চলছে ভোটার স্লিপ দেওয়া, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন, পোলিং এজেন্ট নির্বাচন ও ভোটের দিন কে কোন কেন্দ্রে থাকবে, তার পরিকল্পনা।

এ ছাড়া এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবুল কাশেম (হাতপাখা), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রার্থী শম্পা বসুর (মই) পোস্টারও কিছু কিছু দেখা গেছে। এই আসনে মোট ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাস করে শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর থানা ও রমনা থানার একাংশ নিয়ে গঠিত হয় ঢাকা-৮। এর আগে এই আসন বর্তমান ঢাকা-৯-এর সঙ্গে ছিল। এখন ভোটার ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৩। মির্জা আব্বাস ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অবিভক্ত ঢাকা-৯ থেকে নির্বাচন করেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনি জয়লাভ করেন। আর ১৯৯৬ সালে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী। আসন বিন্যাস হওয়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে মির্জা আব্বাস অংশ নেননি। তখন এই আসন থেকে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেন হাবিব-উন-নবী খান। ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসনে সাংসদ হন রাশেদ খান মেনন।

>প্রায় দিনই গণসংযোগ করেছেন রাশেদ খান মেনন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাস গত দুই সপ্তাহে মাঠে নেমেছেন চার দিন।

প্রতীক বরাদ্দের পর ১০ ডিসেম্বর থেকে প্রায় প্রতিদিনই মিছিল ও গণসংযোগ করেছেন রাশেদ খান মেনন। আর গেল দুই সপ্তাহে মাত্র চার দিন মাঠে নেমেছিলেন আব্বাস। ১৫ ডিসেম্বর তিনি গণসংযোগে নেমে হামলার মুখে পড়েন। এরপর গত ২১ নভেম্বর ঘণ্টাখানেক প্রচারে নামার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত মাঠে নামেননি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে এই আসনে হাতপাখা ও মই প্রতীকের গণসংযোগ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

শান্তিনগর বাজারের একজন ফল বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ দেখছেন না তিনি। কারণ, প্রচার–প্রচারণা হচ্ছে একপক্ষীয়। বিএনপির লোকদের এখনো হয়রানি করছে পুলিশ। তবে শাহবাগ এলাকার বাসিন্দা স্বপন সরকার বলছেন, নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। কারণ, দু–একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া এই আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রচারে ছিলেন। দুই প্রার্থীই বেশ শক্তিশালী।

গতকাল সোমবার বিকেলে ইস্কাটন ও মগবাজার এলাকায় পথসভা ও শোভাযাত্রা করেন মেনন। পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তবা জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি অলিগলিতে গণসংযোগে তাঁরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। গণসংযোগের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে মতবিনিময় সভাও হয়েছে। নৌকা প্রতীককে জয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী একজোট হয়ে কাজ করছেন। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ অনেক আগেই তাঁরা শেষ করেছেন। এজেন্ট নির্বাচনও শেষ পর্যায়ে আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে তাঁরা জয়লাভ করবেন।

এদিকে মহানগর পূর্ব ছাত্রদল সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর হামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দৃশ্যমান প্রচারে কম ছিলেন। অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাসাবাড়িতে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মির্জা আব্বাসের জয় নিশ্চিত।  

তবে ভোটের দিন কেমন পরিবেশ থাকবে, তা এখনো বুঝতে পারছে না জানিয়ে এই আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি।