শঙ্কা আছে, তবু যাবেন ভোটকেন্দ্রে

তাহমিনা আক্তার,জাবেদা বেগম,ফাতেমা আক্তার
তাহমিনা আক্তার,জাবেদা বেগম,ফাতেমা আক্তার

বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের কারণে তাঁরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাঁরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তবে ভিন্ন চিন্তাও আছে। সহিংসতার আশঙ্কায় ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। রাজধানীর বিভিন্ন আসনের নানান শ্রেণি-পেশা-বয়সের নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন মনোভাবের কথা।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নারীদের চিন্তাভাবনা জানতে গত এক সপ্তাহে বিপণিবিতান, বিনোদন কেন্দ্র, বস্তি ও বাজারে কথা হয় অন্তত ৫০ জন নারীর সঙ্গে। অনেক নারী অবশ্য ভোট নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ঢাকা নগরের ১৫টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ১৭ হাজার ৭৭৫ জন। তাঁদের মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার ৭৬ জন।

ঢাকা-৮ আসনের বাসিন্দা আয়েশা আমিন বলেন, ‘একজন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। তবে ভোটের দিন পরিবেশ কেমন থাকবে, সেটা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে আছি।’ নিউমার্কেটে শীতবস্ত্র কিনতে আসা এই শিক্ষক জানান, দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোট দিতে যাননি। তবে অষ্টম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোট দিয়েছিলেন।

গৃহিণী হাসনা বেগম ঢাকা-১৪ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন সব জায়গায় একটা উৎসবের আমেজ থাকে। পরিবারের সবাই মিলে কেন্দ্রে যাওয়ার আনন্দই অন্য রকম। অবশ্যই ভোট দিতে যাব।’

তবে বেসরকারি কর্মকর্তা রেজওয়ানা আফরোজ বলেন, ‘ভোট নিয়ে চিন্তাভাবনার কিছু নেই। ভোটের নিয়ন্ত্রণ জনগণের হাতে নেই। ভোট দিলেও যা হবে, না দিলেও তা-ই হবে। তা ছাড়া ঝামেলাও হতে পারে।’ ঢাকা-১৩ নির্বাচনী এলাকার এই বাসিন্দা জানান, শুধু তিনি নন, নিরাপত্তাজনিত কারণে পরিবারের অন্যদের ভোট দিতে যেতেও নিরুৎসাহিত করবেন।

>নাগরিক অধিকার প্রয়োগে ভোট দিতে চান নারী ভোটাররা। অনেকে আছেন সহিংসতার আশঙ্কায়।

ঢাকা-১০ আসনের ভোটার ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ভোট দেব, খুবই রোমাঞ্চিত। নিরাপদ পরিবেশ থাকলে কেন্দ্রে যাব।’ অন্যদিকে যা-ই হোক না কেন, ভোট দিতে যাবেন ঢাকা-১৫ আসনের তরুণী স্নিগ্ধা আক্তার।

নতুন ভোটার শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ভোট দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রথম অধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছি। অবশ্যই ভোট দিতে যাব।’ নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রার্থীকে বেছে নেবেন ঢাকা–১৬ আসনের এই ভোটার।

কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করেন জাবেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘ভুট নৌকাত, ধানের শীষ, না পাঙ্খাতে দিমু, হেইডা কেন্দ্রে গিয়া ঠিক করমু।’ ঢাকা-১৫ নির্বাচনী এলাকার ছুটা গৃহকর্মী মমতাজ বেগমেরও একই মত।

নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা মহানগরীর সব কটি আসনেই নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ ৭০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি পাঁচটি আসনে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারীরা বেশি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘ঢাকার একজন ভোটার হিসেবে লক্ষ করছি, নারীরা ভোট দিতে আগ্রহী, কিন্তু ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। সহিংসতার ভয়ও আছে। এর বড় কারণ নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থার অভাব। নির্বাচন কমিশন যা-ই বলুক না কেন, হামলার ঘটনা ঘটছেই।’