জামায়াত-বিএনপির দ্বন্দ্ব

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াত-বিএনপির দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে শুরু থেকে মাঠে সক্রিয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদের (আপেল প্রতীক) পরিবার। আযাদ এখনো কারাবন্দী। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মাঠে নামেন বিএনপির প্রার্থী আলমগীর মো. মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। এরপর প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। আলমগীর ফরিদকে মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে জামায়াত নেতারা বিএনপির শীর্ষ মহলে ধরনা দিচ্ছেন।

জেলা বিএনপি বিবৃতি দিয়ে হামিদ আযাদকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না। আলমগীর ফরিদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, শেষ দিন পর্যন্ত তিনি মাঠে থাকবেন। এই পরিস্থিতিতে সুবিধা নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। বিএনপির আলমগীর ফরিদ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশেকের চাচা। বাড়িও একই গ্রামে। 

জামায়াত-বিএনপির দ্বন্দ্ব

প্রচারণা শুরুর পর আপেল প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ করছেন হামিদুর রহমান আযাদের স্ত্রী জেবুন্নিছা চৌধুরী। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ধানের শীষ নিয়ে বিএনপি প্রার্থী আলমগীর ফরিদ মাঠে নামায় তিনি বিপাকে পড়েন। জেবুন্নিছা চৌধুরী বলেন, পুলিশি হয়রানি ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে এমনিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা এলাকাছাড়া। তার ওপর বিএনপিও সহযোগিতা করছে না। অথচ হামিদুর রহমান আযাদ ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আইনি জটিলতায় ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়নি। তাই হামিদুর রহমান আযাদকে আপেল নিয়ে নির্বাচন করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা বলেন, এ আসনে যদি বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আযাদের পক্ষে কাজ না করে, সে ক্ষেত্রে অপর তিনটি আসনেও জামায়াত-বিএনপির দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। তখন সমস্যা প্রকট হতে পারে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আলমগীর ফরিদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি বিএনপির শীর্ষ মহলে জানানো হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ২০–দলীয় জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার বিএনপি নেতা-কর্মীদের আপেল প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিএনপির কেউ আযাদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি।

গত রোববার সন্ধ্যায় শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে আলমগীর ফরিদ ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা–মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করেন। 

সুবিধায় আওয়ামী লীগ

প্রার্থিতা নিয়ে জামায়াত-বিএনপির দ্বন্দ্ব চলছে। অন্যদিকে ব্যাপক গণসংযোগ ও পথসভা করে চলেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। গত রোববার তিনি মহেশখালী পৌরসভার রাখাইনপাড়া, গোরকঘাটা, চরপাড়া, হিন্দুপাড়ায় গণসংযোগ করেন। এর আগে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ৪০টি পথসভা করেন তিনি। পথসভাগুলোতে আশেক উল্লাহ রফিক সরকারের ১০ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। মানুষের বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় শেখ হাসিনাকে সরকার গঠনের সুযোগ দিতে নৌকায় ভোট চাইছেন।

ভোটাররা বলছেন, বিএনপি-জামায়াতের ‘দুর্গ’ খ্যাত এই আসনে প্রচার–প্রচারণা ও গণসংযোগে নৌকা অনেক এগিয়ে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ২০ ডিসেম্বর মহেশখালীতে গিয়ে নৌকার পক্ষে গণসংযোগ ও একাধিক পথসভায় বক্তৃতা করেন।

এর আগে গণফ্রন্ট প্রার্থী আনসারুল করিম ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহও নৌকার প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। এতে নৌকা অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।