ঢাকা-১২-তে নীরবের নীরবতা, বাকিরা সরব

আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাইফুল আলম নীরব, জোনায়েদ সাকি
আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাইফুল আলম নীরব, জোনায়েদ সাকি

রাজধানীর তেজগাঁও রেলগেট থেকে কারওয়ান বাজার—পুরো এলাকা নির্বাচনী পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে। থেকে থেকে বিভিন্ন দলের প্রার্থীর প্রচার মাইক বেজে উঠছে। খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হচ্ছে। বাজছে নির্বাচনী গান। সব মিলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা এখন জমজমাট এলাকাটি। তবে অন্য প্রার্থীরা প্রকাশ্য সরব থাকলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের কোনো সাড়াশব্দ নেই।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শেরেবাংলা নগর ও রমনার একাংশ নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ১৮৫ নম্বর আসন ঢাকা-১২। এখানে ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৮। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৭০ জন এবং নারী ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৮।

নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র পাঁচ দিন। নির্বাচনী এলাকার রাস্তাঘাট, অলি-গলি সব জায়গাতেই আসাদুজ্জামান খান কামালের ছবি সংবলিত নৌকার পোস্টারের আধিক্য। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জোনায়েদ সাকি (কোদাল মার্কা), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শওকত আলী হাওলাদার (হাতপাখা মার্কা)। তবে নাখালপাড়া, মগবাজার, মধুবাগ, সাতরাস্তা, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে কোথাও ধানের শিষের পোস্টার চোখে পড়েনি।

প্রচারে পিছিয়ে থাকা যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব মামলায় এগিয়ে। তার মামলার সংখ্যা ২৬৭টি।

কারওয়ান বাজার এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নৌকা মার্কার পোস্টার। ছবি: প্রথম আলো
কারওয়ান বাজার এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নৌকা মার্কার পোস্টার। ছবি: প্রথম আলো

কেমন চলছে নির্বাচনী প্রচার? জবাবে তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা আবদুল মোমিন বলেন,‘ অন্য এলাকার খবর জানি না। তয় আমাগো এলাকায় নির্বাচনী আমেজ পাওয়া যাইতেছে। কোদাল মার্কার সাকি উনি ভোট চাইতে আসছিলেন। নৌকার সমর্থকেরা মিছিল করতেছে। ভোট চাইছে। বিভিন্ন মার্কার গান বাজাইতাছে।

কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার আবুল কালাম বলেন, কাঁঠালবাগান এলাকায় আমার বাসা। কিন্তু সারা দিন তো কারওয়ান বাজারেই থাকি। প্রতিদিন নৌকার মিছিল হয়, গান বাজে। এ ছাড়া হাতপাখা ও কোদাল মার্কার পোস্টার ও মাইকিং চোখে পড়ছে। কাঁঠালবাগান এত জমজমাট প্রচারণা নাই। কিন্তু এখানে সারা দিন ভোটের আমেজ পাওয়া যাইতেছে।

হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা মোক্তার হোসেন বলেন, একদিন শুধু দেখছি ধানের শিষের পোস্টার আমাদের এলাকায় টাঙিয়েছে। পরে আর চোখে পড়েনি। কে যেন পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, এই এলাকায় এগিয়ে আছে নৌকার প্রার্থী। তবে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে তা বলা কঠিন।

বিএনপি প্রার্থী নীরব সরাসরি প্রচারণায় না থাকলেও তিনি মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন।

নাখালপাড়ার বাসিন্দা মো. ইয়াসিন আলী বলেন, নীরবকে মাঠে দেখিনি তবে তার খুদে বার্তা পেয়েছি। তিনি তাঁর মুঠোফোনে নীরবের পক্ষে ভোট চাওয়ার খুদে বার্তা দেখিয়ে বলেন, এভাবে গোপন স্থান থেকে ভোট চাইলে হবে? ভোটারদের কাছে এসে ভোট চাইতে হবে তাহলেই মানুষ ভোট দেবেন। এই এলাকার আরও কয়েকজন বাসিন্দাও জানালেন, তাঁরা মোবাইলে নীরবের খুদেবার্তা পেয়েছেন।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের গেটে নৌকা মার্কার নির্বাচনী কার্যালয় বসানো হয়েছে। কার্যালয়ের টেবিলে কয়েকটি চায়ের কাপ, ইলেকট্রিক কেটলি আছে। নৌকার সমর্থকদের আনাগোনা চলছে সব সময়। বাজানো হচ্ছে নির্বাচনী গান। কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখান থেকে এই এলাকার নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। কোথাও পোস্টার নষ্ট হলে তা আবার লাগানো হচ্ছে। কর্মীরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে চা খাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে গিয়ে কর্মীরা ভোট চাইছেন নৌকার পক্ষে।

শেরে বাংলা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় জোনায়েদ সাকি । ছবি: প্রথম আলো
শেরে বাংলা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় জোনায়েদ সাকি । ছবি: প্রথম আলো

এই এলাকার বাসিন্দা মোতালেব জানালেন, বেশ কয়েক দিন থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এই এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। প্রার্থীরা কয়েকজন সরাসরি ভোট চাইতে এসেছেন। সব মিলে নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে।

শেরেবাংলা নগর স্টাফ কোয়ার্টারের কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জোনায়েদ সাকি তাদের এলাকায় এসেছিলেন। তরুণ হিসেবে তাঁর কথা তাঁদের পছন্দ হয়েছে। এমন একজন প্রার্থী নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন তাঁরা।

মগবাজারে কথা হয় নয়াটোলার বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা চাই এই এলাকার উন্নয়ন হোক। সংসদ নির্বাচনে যেই নির্বাচিত হন না কোন তাকে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সব বিবেচনায় আমরা এমন প্রার্থীর সঙ্গে আছি যিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন।

নির্বাচনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন। অন্য প্রার্থীদের অংশগ্রহণ কেমন এই প্রশ্নে কামাল বলেন, ‘অন্য প্রার্থীরা তো ভালোই প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপি প্রার্থী নীরবের নামে অনেক মামলা থাকায় ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তিনি সরাসরি প্রচারণায় আসে নি। গোপন স্থান থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন।’

প্রচারের ক্ষেত্রে নানা অভিযোগ পাওয়া গেল বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা জোনায়েদ সাকির কাছে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এই আসনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই সব প্রতিকূলতার মধ্যে প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন সাকি। তিনি বললেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ও মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে যেতে পারলে জয়ের বিষয়ে আমি আশাবাদী।

তেজগাঁও এলাকায় ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের শওকত আলী হাওলাদারের হাতপাখা মার্কার পোস্টার। । ছবি: প্রথম আলো
তেজগাঁও এলাকায় ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের শওকত আলী হাওলাদারের হাতপাখা মার্কার পোস্টার। । ছবি: প্রথম আলো

নির্বাচনের প্রচারে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানালেন ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের শওকত আলী হাওলাদার। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যে সাড়া পাচ্ছি তাতে আমরা আনন্দিত। তবে গতকাল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় গিয়ে আমাদের আশাহত হতে হয়েছে। এখানে আমরা চার হাজারের বেশি পোস্টার লাগিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি একটা পোস্টারও নেই। শুধু একজন ব্যক্তির পোস্টার সেখানে দেখা গেছে।
বিএনপি প্রার্থী নীরবের নির্বাচনী কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে চাইলে দলের কেউ প্রকাশ্য মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিএনপির কয়েকজন সমর্থক বলেন, তাদের প্রার্থী বিশেষ কারণে প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রচারে আসতে পারছেন না। তবে সমর্থকেরা যতটা সম্ভব মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা আশা করেছেন, ভোটারেরা তাদের নির্বাচিত করবে।