বগুড়ার শেরপুরে বিএনপির প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা

বগুড়ার শেরপুরে সংসদীয় নির্বাচনের প্রচারণার ইতিহাস ছিল সম্প্রীতির, সেই রেকর্ড আর রইল না। পুলিশের উপস্থিতিতে গতকাল সোমবার ধানের শীষের প্রার্থী জি এম সিরাজের গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তছনছ করা হয়েছে বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প (কার্যালয়)।

ধুনট ও শেরপুর নিয়ে বগুড়া-৫ আসন। স্বাধীনতার পর কোনো সংসদ নির্বাচনে এখানে বড় ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি বলে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আওয়ামী লীগের ২০–২৫ জন নেতা–কর্মী গতকাল দুপুরে উপজেলার গোসাইবাড়ি বটতলা এলাকায় জি এম সিরাজের গাড়িবহরের গতিরোধ করেন। এ সময় তিনি দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান। এর ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে গাড়িবহরকে বিকল্প পথে যেতে বলে। কিন্তু এতে রাজি হননি সিরাজ। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা–কর্মী হাজির হন। পুলিশ ‘বিবদমান দুই পক্ষকে’ নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় অন্তত ৭টি গাড়ি ও ৮টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

নির্বাচনী গণসংযোগের অংশ হিসেবে বিএনপির প্রার্থী সিরাজের গাড়িবহর উপজেলার দুবলাগারি চকপোতা থেকে কুসুম্বি ইউনিয়নে যাচ্ছিল।

বিএনপির প্রার্থী সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের প্রস্তাব মানলে তাঁকে অনেকটা পথ ঘুরতে হতো। তা ছাড়া, প্রায় দুই হাজার মানুষের একটি মোটর শোভাযাত্রা কেন মাত্র ২৫ জনের বাধার কাছে হার মানবে।

জি এম সিরাজ বলেন, তাঁর গাড়িবহরে ১১ ডিসেম্বরও হামলা হয়েছিল। কিন্তু তা পুলিশের সামনে ঘটেনি। আর তা ঘটেছিল ধুনটে। ধুনট নৌকার প্রার্থী হাবিবর রহমানের এলাকা।

গতকাল ও এর আগের হামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে হাবিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে প্রথম আলো। তাঁর একজন কর্মকর্তা ফোন ধরেন। কিন্তু কথা বলার কারণ জানতে চাওয়ার পর ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। পরে আর ফোন ধরেননি।

তবে মুঠোফোনে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র আবদুস সাত্তার দাবি করেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগের ১২ জন নেতা–কর্মীকে মারধর করেছে বিএনপি। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, হামলায় তাদের তো কেউ আহত হয়নি।

এদিকে গতকাল বিকেল ৫টায় জি এম সিরাজ শেরপুরের ইউএনওর কার্যালয়ে এবং সন্ধ্যা সাতটায় শেরপুর থানায় গিয়ে হামলার বিষয়ে অভিযোগ করেন।

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত আলী শেখ গতকালের ঘটনাকে দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ওসি হুমায়ুন কবিরকে সিরাজের পথসভার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। যদিও ওসি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সকালে নয়, ঘটনার পরে তিনি ইউএনওর কাছ থেকে ফোন পান।

ইউএনও বলেছেন, তিনি গাড়িবহরে হামলার ঘটনাটি বিজিবিকেও জানিয়েছিলেন।

গত রাত নয়টায় বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিষয়টি জেনেছেন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর–ধুনট সার্কেল) গাজিউর রহমান শেরপুর থানাতেই বসেন। ওসি এবং তাঁর উদ্দেশে বিএনপির প্রার্থী সিরাজ গতকাল রাতে থানায় বলেন, ছোটখাটো অনেক বিষয়ে তিনি পুলিশকে অবহিত করেন না। আজ (গতকাল) নিরুপায় হয়ে করেছেন। তাঁর কর্মীরা মার খেয়েছে। আবার তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের যেন গায়েবি মামলায় জেলে পাঠানো না হয়।