নির্বাচনের নামে ত্রাসের রাজত্ব চলছে

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী মওদুদ আহমদ। ২৬ ডিসেম্বর, বুধবার, নোয়াখালী। ছবি: প্রথম আলো।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী মওদুদ আহমদ। ২৬ ডিসেম্বর, বুধবার, নোয়াখালী। ছবি: প্রথম আলো।

নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ অভিযোগ করে বলেছেন, ‘এটা কোনো নির্বাচন নয়। এখানে নির্বাচনের নামে ত্রাসের রাজত্ব চলছে। এটাকে নির্বাচন না বলে সরকারি দলের দুর্বৃত্তায়ন বলা চলে। এখানে সামান্যতম নির্বাচনী পরিবেশ নেই।’

আজ বুধবার বিকেলে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ এ অভিযোগ করেন।

মওদুদ আহমদের মতে, এই অবস্থা যদি সারা বাংলাদেশে হয়, তা হলে নির্বাচনের ওপর মানুষের বিশ্বাস একেবারেই চলে যাবে। আর কোনো আস্থা কোনো দিন থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো আশাবাদী, ভোটাররা যদি নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তা হলে আমার মতো সারা দেশে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘দেশের মানুষ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে দেখুক দলীয় সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগের প্রমাণ করার জন্য এটা একটা সুযোগ ছিল যে, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। কিন্তু তারা ক্ষমতার লোভে পেশিশক্তি দিয়ে, পুলিশের শক্তি দিয়ে ও বল প্রয়োগ করে নির্বাচন করতে চাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, দেশবাসী যদি ভোট দিতে না পারে, তাহলে এ সরকারের জন্য কলঙ্ক হবে এবং গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটবে বাংলাদেশে।

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচন চালিয়ে যাবেন জানিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘প্রচার ও গণসংযোগে বাধার বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সেনাবাহিনীর জেলার দায়িত্বে থাকা লে. কর্নেল মুনির, কোম্পানীগঞ্জে মেজর মোস্তফা, থানার ওসিসহ সবাইকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতেই আমাকে নির্বাচন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসন ও সরকারি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মওদুদ আহমদ বলেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ৩১টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় ৯৬৫ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১ হাজার ৬৪৯ জনকে। এ ছাড়া গত ১০ ডিসেম্বর প্রচারণা শুরুর পর থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত ৭৬৬ জনকে আহত করা হয়েছে। নির্বাচনে যাঁদের মূল কাজ করার কথা, তাঁদের মধ্যে ৭৮ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে।

মওদুদের অভিযোগ অস্বীকার উপজেলা আ.লীগের
মওদুদ আহমদের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। বুধবার বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল বলেন, মওদুদ আহমদের সব বক্তব্য ভিত্তিহীন, অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত। নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের সাড়া না পেয়ে তিনি অবান্তর বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এমন একটা ঘটনা তিনি প্রমাণ করুন, যে ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ কিংবা এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত।’

মিজানুর রহমানের দাবি, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওবায়দুল কাদেরের উন্নয়ন ও সুশাসনের ফলে নোয়াখালী-৫ আসনের জনগণ মওদুদ আহমদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই কারণে তিনি অনেকটা দিশেহারা হয়ে আওয়ামী লীগ ও ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন।