চায়ের কাপে ঝড় নেই!

জিতবে কে? আওয়ামী লীগ, না বিএনপি? কোন দল কত আসন পাবে? বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন নানা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে জম্পেশ আড্ডা চলত পথের পাশের টং দোকানে। প্রায়ই সে আড্ডা গড়াত তর্কে-বিতর্কে। কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অনেক সময় দোকানিকে ঝামেলা মেটাতে মধ্যস্থতা করতে হতো।

দোরগোড়ায় একাদশ সংসদ নির্বাচন। কিন্তু চায়ের দোকানের চিরচেনা সেই তুমুল আড্ডাটা দেখা যাচ্ছে না। উত্তাপ না ছড়িয়ে বরং দোকানগুলোতে কেমন এক শীতলতা! নির্বাচনকেন্দ্রিক টুকটাক যা আলাপ হয়, তাতে সহিংসতা নিয়ে শঙ্কাটাই মুখ্য। চা–বিক্রেতারা বলছেন, ঝামেলা এড়াতে তাঁরা নির্বাচন নিয়ে আড্ডা সমর্থন করেন না।

গতকাল বুধবার মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার ধারের একটি চায়ের দোকানে আদা-মেশানো দুধ চায়ে চুমুক দিয়ে অন্য ক্রেতাদের আলাপে কান পাততেই শোনা গেল নতুন বছরে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, বাসা বদলানোর ঝক্কি, ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি, শীতের সবজির দাম কিংবা বেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ। নির্বাচনের বিষয় সেখানে অনুপস্থিত।

সেখানে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী চায়ে চুমুক দিতে দিতে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। পাশেই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুই সহকর্মী নির্বাচনের পরের দিন বাসাবদলের ঝক্কি নিয়ে আলোচনারত। আরেক ব্যক্তি ব্যস্ত চায়ে ভিজিয়ে রুটি মুখে দিতে।

দেশের কী হালচাল? নির্বাচনের কী অবস্থা? এমন প্রশ্ন করতেই দোকানে বসা ছয় ব্যক্তি একে অপরের দিকে তাকান। শরিফুল আলম নামের একজনের সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘৩০ তারিখ ভোট। দেশের অবস্থা ভালো।’ ইশতিয়াক ভূঁইয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নির্বাচনের কী অবস্থা, সেটা দেশের সবাই জানে।’ তবে এবারের নির্বাচনকে তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, ঘরোয়া পরিবেশের বাইরে কেউ নির্বাচন নিয়ে আলাপে স্বচ্ছন্দবোধ করেন না।

একই ধরনের কথা বলেন ঢাকা-১১ আসনের ভাটারা এলাকার একজন চা–বিক্রেতা। মধ্যবয়স্ক এই চা–বিক্রেতা কিছুটা ঝাঁজের সঙ্গে বলেন, ‘চা-বিস্কুট খাইতে দোকান খুলছি, ইলেকশন (নির্বাচন) নিয়ে কথা বলার জন্য না।’ ক্রেতাশূন্য হলে এই দোকানদার তাঁর জীবনে নির্বাচনকালে এমন উত্তাপহীন চায়ের দোকান দেখেননি উল্লেখ করে বলেন, ‘কারণডা জানি না। তয় ইলেকশন নিয়া কেউ আলাপ দেয় না।’

এই দোকানি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বই পরবর্তী সবগুলো নির্বাচন দেখেছেন। কিন্তু এবারই নির্বাচন নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় নেই বলে জানান।

বেশ কয়েকজন চায়ের দোকানদার বলেন, নির্বাচনের সময় বরাবরই তাঁদের চা বিক্রি বেড়ে যেত। মিলত বাড়তি পয়সাও। এবার তা হচ্ছে না। স্মৃতি হাতড়ে তাঁরা আরও জানান, নেতারা দোকানে এসে কর্মীদের জন্য চায়ের ফরমাশ দিতেন। তা ছাড়া, স্থানীয় তরুণ, প্রবীণেরাও চা খেতে খেতে আলোচনার ঝড় তুলতেন। অনেক সময় সে তর্কে-বিতর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হতো। এবার সেসব হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উপস্থিতিও কম।

নির্বাচন সামনে রেখে চায়ের পাশাপাশি দোকানে কফির আয়োজন রেখেছিল ঢাকা-১৪ আসনের মিরপুর-১-এর এক দোকানি। এই বিক্রেতা বলেন, ‘ভেবেছিলাম নির্বাচন ঘিরে জমজমাট হয়ে উঠবে। বিক্রি বাড়বে। বরং হয়েছে উল্টো। হিম হিম ঠান্ডায় উষ্ণতা নিতে অন্য সময়ের চেয়ে ক্রেতা কম।’