'শেষটা ভালা অইলেই রক্ষা'

সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমরান আহমদের পক্ষে চলছে ডিজিটাল প্রচারণা। গতকাল দুপুরে জৈন্তাপুর উপজেলা বাজারে।  প্রথম আলো
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমরান আহমদের পক্ষে চলছে ডিজিটাল প্রচারণা। গতকাল দুপুরে জৈন্তাপুর উপজেলা বাজারে। প্রথম আলো

‘তলেতলে বহুত ঘটনা ঘটের। বাজারও বহুত মাতখতা (কথাবার্তা) আছে। ভোটও ঝামেলা অইবো। আমরার আশা, শেষটা ভালাই অইবো। ভালা অইলেই রক্ষা।’

ভোট কেমন হবে—এমন জিজ্ঞাসায় এভাবেই বলছিলেন সিলেটের জৈন্তাপুরের দরবস্তবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী জামিল আহমদ। গতকাল বুধবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনের জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন অবস্থান করে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সব প্রার্থীরই ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন বাজার এবং সড়ক এলাকায় দেখা গেছে।

ভোটাররা বলছেন, উপজেলাগুলোতে দলীয় ভোট রয়েছে মোট ভোটের অর্ধেক। বাকি অর্ধেক সাধারণ ভোটার। সাধারণ ভোটাররা যেদিকে ঝুঁকবেন, সেই প্রার্থীই জয়ী হবেন। ভোটকেন্দ্রে কোনো ঝামেলার খবর ছড়িয়ে পড়লে উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে। জৈন্তাপুর উপজেলা সদর এলাকায় গত সংসদ নির্বাচনে জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও থুবাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় জৈন্তাপুর সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিস্ফোরক পাওয়ার জেল, ডেটোনেটর উদ্ধার করেছিলেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এসব নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। তাঁরা বলছেন, নির্বাচনের সহিংসতায় এসব বিস্ফোরক ব্যবহৃত হতে পারে। এর ভয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে।

সিলেট-৪ আসন জেলার একমাত্র নির্বাচনী এলাকা, যেখানে তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনেই রয়েছে দেশে-বিদেশে পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, বিছনাকান্দি ও রাতারগুল। প্রার্থীদের প্রচারণায় পর্যটন এলাকায় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও আছে। প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান সাংসদ ইমরান আহমদ, বিএনপির সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির এ টি ইউ তাজ রহমান, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী মনোজ কুমার সেন এবং বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা জিল্লুর রহমান।

সিলেটের জৈন্তাপুরের দরবস্ত এলাকায় সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেনের নির্বাচনী পথসভা। গতকাল বিকেলে।  প্রথম আলো
সিলেটের জৈন্তাপুরের দরবস্ত এলাকায় সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেনের নির্বাচনী পথসভা। গতকাল বিকেলে। প্রথম আলো

জৈন্তাপুরের চিকনাগুল বাজারের ব্যবসায়ী কুতুব আলী বলেন, নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের দুই প্রার্থীই টান আছে। অন্য প্রার্থীদের সুর তেমন পাওয়া যায় না। এই দুই প্রার্থীর মধ্য থেকেই একজন নির্বাচিত হবেন। যে–ই জয়ী হোক, তাঁর কাছে সাধারণ মানুষ চায় সুখে–দুঃখে যেন পাশে থাকেন। উপজেলার প্রধান দাবির বিষয়ে কুতুব আলী বলেন, ‘আমরা অনেক দিন থেকে গ্যাস–সংযোগের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। কত সরকার গেল, কিন্তু আমরা এখনো গ্যাসের কোনো লাইন পাইনি। যে–ই নির্বাচিত হবেন, তাঁর কাছে প্রধান ও প্রথম দাবি গ্যাস–সংযোগের।’

গোয়াইনঘাটের মামার বাজার এলাকার বাসিন্দা আরিফ আহমদ প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবেন। তিনি বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি উপজেলায় বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা রয়েছে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। আগামীর সাংসদের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, এসব পর্যটন এলাকার উন্নয়ন ও পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার।’

বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম নিজেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের সময় এলাকার বেশ উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শিক্ষা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিয়েছে। নৌকার সমর্থনে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আবারও নৌকার প্রার্থীকে এলাকার বাসিন্দারা বেছে নেবেন।

জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাফিজ বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের গণগ্রেপ্তার চালানো হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থীর পথসভা করতে বাধানিষেধ দেওয়াসহ নির্বাচনের এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন সরকারি দলের নেতা–কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু এরপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং ভোটকেন্দ্রে সাধারণ ভোটরার উপস্থিত হলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নির্বাচিত হবেন।

গতকাল বিকেল সাড়ে তিনটায় বিএনপির প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিম হরিপুর বাজারে, সাড়ে পাঁচটায় জৈন্তাপুর সদরে পথসভা করেছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইমরান আহমদ বিকেল সাড়ে তিনটায় জৈন্তাপুর উপজেলা সদরে পথসভা করেছেন।