প্রতিকূলতার মধ্যেও প্রচারে বিএনপি জোটের ১২ প্রার্থী

কোনো প্রার্থীর গণসংযোগ ভন্ডুল হয়েছে হামলায়, কেউ গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় মাঠেই নামতে পারেননি। আবার প্রচারণায় নামতে গিয়ে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর নেতা-কর্মীদের কারণে বাসভবনে অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে কাউকে। ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনে বিএনপি জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে প্রচারণা শুরুর পর থেকেই।

যদিও আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময় শেষ হবে কাল সকাল ৮টায়, ফলে কার্যত আজ বৃহস্পতিবারই প্রচারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দের পর গতকাল বুধবার পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনের বিএনপি জোটের ১২ জন প্রার্থী কমবেশি প্রচারে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ৪ জন। আর এখন পর্যন্ত প্রচারেই নামেননি ৩ প্রার্থী। তাঁরা হলেন ঢাকা-১০ আসনের আবদুল মান্নান, ঢাকা-১২ আসনের সাইফুল আলম ও ঢাকা-১৫ আসনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম এক দিনের জন্যও প্রচারে নামেননি। তাঁদের দাবি, প্রশাসনের নানামুখী চাপের কারণে তাঁরা গণসংযোগে বের হতে পারেননি।

ঢাকা-৪ থেকে ১৮, এই ১৫টি আসন ঢাকা মহানগর এলাকাভুক্ত। এই ১৫ আসনের মধ্যে ১০টিতে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে। আর ঐক্যফ্রন্ট ও ২০–দলীয় জোটের শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে ৫টি।

স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ৬টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে বিএনপি নেতা এস এ খালেক পরিবারের। এবার তাঁর ছেলে সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা-১৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। বিএনপির এই তরুণ প্রার্থীর আক্ষেপ, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো অভিজ্ঞতাই এবার তাঁরা কাজে লাগাতে পারেননি। এবারের নির্বাচনে নজিরবিহীন যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তা এর আগে কখনো দেখেননি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ঢাকা মহানগরে এবার বিএনপির আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে আছেন ঢাকা-৪ আসনে সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস ও ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস।

তাঁদের মধ্যে সালাহ উদ্দিন আহমেদের দাবি, তিনি এক দিন বাসায় অবরুদ্ধ ছিলেন। তবে তাঁর গণসংযোগে হামলার পরও প্রায় প্রতিদিনই তিনি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।

২১ ডিসেম্বর ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের গণসংযোগে হামলার পর এক দিন প্রচারে নেমেছিলেন তিনি। এরপর গতকাল পর্যন্ত তিনি আর প্রচারে নামেননি। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আব্বাস বলেছিলেন, ‘মনে হয় গেরিলা কায়দায় প্রচার চালাচ্ছি।’ ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের গণসংযোগে হামলা হয়েছে ৪ বার। সর্বশেষ ২৩ ডিসেম্বর তাঁর গণসংযোগে হামলার পর তিনি আর মাঠে নামেননি। প্রচারে বাধা পেয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘নিরাপত্তাও পাচ্ছি না, বিচারও পাচ্ছি না।’

অন্য প্রার্থীদের মধ্যে নিয়মিত প্রচারে নেমেছিলেন ঢাকা-১১ আসনের প্রার্থী শামীম আরা বেগম। এরপরই আছেন ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী নবী উল্লা ও ঢাকা-১৪ আসনের প্রার্থী সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজনের ওপর যে হামলা হয়েছিল, তখন সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকের বেশ কয়েকজন অনুসারীও আহত হয়েছিলেন।

ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী আবদুস সালাম, ঢাকা-৬ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরী প্রায় সাত দিন করে গণসংযোগ করেছেন। সুব্রত চৌধুরীর দাবি, তাঁর গণসংযোগে ৪ বার হামলা হয়েছে। গতকাল তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে আর প্রচারে নামবেন না। এখন পোলিং এজেন্ট নির্বাচন নিয়ে কাজ করছেন।

ঢাকা-৭ আসনের প্রার্থী ঐক্যফ্রন্টের মোস্তফা মোহসীন ও ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী ঐক্যফ্রন্টের শহীদ উদ্দিন মাহমুদ গণসংযোগে নেমেছেন মাত্র ৪ দিন করে। ঢাকা-১৬ আসনের প্রার্থী আহসান উল্লাহ ও ঢাকা-১৭ আসনে ২০–দলীয় জোটের শরিক বিজেপির আন্দালিভ রহমান গণসংযোগে নেমেছেন শুধু এক দিন করে। তাঁদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর গতকালই আহসান উল্লাহ প্রথম গণসংযোগে নামেন।

ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী আবদুল মান্নান গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন। এই প্রার্থীর দাবি, প্রতীক বরাদ্দের পর বেশ কয়েক দিন তাঁর বাসার আশপাশে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ছিল। নেতা-কর্মীদের যেখানে পেয়েছে, সেখান থেকেই আটক করেছে, তাই গণসংযোগে বের হননি।

এদিকে প্রতীক বরাদ্দের পর গতকাল পর্যন্ত ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থী সাইফুল আলম ও ঢাকা-১৫ আসনের জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান নিজেরা এক দিনও প্রচারে নামেননি। তাঁদের মধ্যে শফিকুর রহমানের অনুসারীরা গত মঙ্গলবার বড় পরিসরে গণসংযোগ করেছেন। এই প্রার্থীর কর্মীরা বেশ কয়েক দিন লিফলেটও বিতরণ করেছেন।

আর ঢাকা–১২ আসনের সাইফুল আলমের পক্ষে ছোট পরিসরেও কোনো গণসংযোগ হয়নি। তবে তাঁর পক্ষে মহিলা দলের কর্মীরা বাসাবাড়িতে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন। তাঁর দাবি, লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে ৩ জন নারী কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। পোস্টার লাগাতে গিয়ে আটক হয়েছেন ২ জন এবং ১ জনের হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই দলীয় ভূমিকায় ছিলেন বলেও মন্তব্য করেছেন সাইফুল আলম।

নির্বাচনের পরিবেশ–পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, এ নিয়ে তাঁর কথা বলার কোনো ভাষা নেই। তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতিদিন তাঁর শাহজাহানপুরের বাসা থেকে নেতা-কর্মীদের আটক করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারের ন্যূনতম সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি।