ক্ষমতাসীনদের দাপটে মাঠে দাঁড়াতেই পারেনি বিএনপি

প্রতীক বরাদ্দের পর টানা ১৮ দিন নির্বাচনী প্রচার গতকাল কার্যত শেষ হয়েছে। এবার মহানগরীতে দৃশ্যত ক্ষমতাসীন দল ও তাদের জোটমিত্ররাই নির্বাচনী প্রচারে এগিয়ে ছিল। বিএনপিসহ অন্য প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন, প্রচারে তাঁরা সমান সুযোগ পাননি। ক্ষমতাসীনদের হামলা ও পুলিশের মামলার শিকার হয়ে মাঠে দাঁড়াতেই পারেননি। আজ সকাল আটটা থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শেষ হচ্ছে।

ঢাকা-৪ থেকে ১৮, এই ১৫টি আসন ঢাকা মহানগর এলাকাভুক্ত। এর মধ্যে ১৩টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়ে ২টি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে। বিএনপি ১০টিতে প্রার্থী দিয়ে ৫ আসন ছেড়েছে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের।

১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরপরই মহল্লায় আনন্দ মিছিল করে প্রচারে নামেন আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটমিত্রের প্রার্থীরা। এরপর থেকে তাঁরা ঢাকা মহানগরের আসনগুলোতে একচেটিয়া প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল।

 পরিস্থিতি বুঝে ওঠার জন্য প্রতীক পাওয়ার পর একটু বিলম্বে মাঠে নেমেছিলেন বিএনপি, তাদের জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। কিন্তু হামলা-হয়রানির কারণে তাঁরা প্রচারে সুবিধা করতে পারেননি। শহরে তাঁদের গণসংযোগ, সভা, এমনকি পোস্টারও বিশেষ চোখে পড়েনি ভোটারদের। ফলে বিকল্প হিসেবে তাঁর কৌশল প্রণয়নে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কেউ কেউ মাত্র এক দিন প্রচার করেছেন। আবার প্রচারেই নামেননি এমন প্রার্থীও আছেন তিনজন। তাঁরা হলেন ঢাকা-১০ আসনের আবদুল মান্নান, ঢাকা-১২ আসনের সাইফুল আলম ও ঢাকা-১৫ আসনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম। সাইফুল আলমের ভাষ্য, নির্বাচনের নামে পাতানো খেলা হচ্ছে। প্রশাসন তাঁকে নামতে দেয়নি।

প্রতীক বরাদ্দের পর রাজধানীর বিভিন্ন আসন ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা তাঁদের আসনে ব্যাপক পোস্টার লাগিয়েছেন। পাশাপাশি দিনরাত মাইকিং, নির্বাচনী গানে গোটা রাজধানী ছিল ক্ষমতাসীনদের দখলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছিলেন তাঁরা বেশ সক্রিয়।

গতকালও ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনের নৌকার প্রার্থীরা নিজ এলাকায় বড় ধরনের শোভাযাত্রা করেছেন। তাঁদের এই প্রচারে নির্বাচনী গানের পাশাপাশি ছিল বাদ্যবাজনা ও হরেক রকমের উপস্থাপনা। নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের বিষয়ে তোয়াক্কা করেননি।

অন্যদিকে প্রচার শুরুর পর প্রথম সাত দিনে বিএনপির প্রার্থীদের পোস্টার রাজধানীর কোথাও দেখা যায়নি। অবশ্য ধানের শীষের প্রার্থীদের দাবি, রাতে পোস্টার লাগানোর পর সকাল হতে না–হতেই এসব পোস্টার ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ছিঁড়ে ফেলেছেন। আবার পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছেন কেউ কেউ। এমন পরিস্থিতির কারণে তাঁরা আর পোস্টার লাগাতে পারেননি। ভোটারদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন জানিয়ে ঢাকা-৮ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, দু–একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তাঁর এলাকায় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ছিল।

এদিকে ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী প্রতিপক্ষ ছাড়াও প্রতীক বরাদ্দের পর বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামি দল ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও প্রচারে ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ প্রচারে নেমে বাধার মুখেও পড়েছেন। অনেকের প্রচারে হামলাও হয়েছে।

ঢাকা মহানগরের ঢাকা–৪ ও ঢাকা–৬ আসন দুটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই দুই প্রার্থী গতকাল পর্যন্ত ব্যাপক প্রচারে চালিয়েছেন। 

ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগরের ১৫টি আসনেই প্রার্থী ছিল। সব আসনেই এই দলের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে সক্রিয় ছিলেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের মধ্যে ঢাকা–১২ আসনের প্রার্থী জোনায়েদ সাকি সবচেয়ে বেশি প্রচারে ছিলেন। তাঁর প্রচারে বাধা ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। নারী প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকা–৮ আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শম্পা বসুও সক্রিয় ছিলেন।