সরকারে না বিরোধী দলে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চায় জাতীয় পার্টি

>

• এবার জাপা থেকে ২২ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন
• গতকাল বৃহস্পতিবার শপথ নেন জাপার সাংসদেরা
• অসুস্থতার কারণে এরশাদ শপথ নিতে পারেননি
• শপথের পর জাপার সাংসদেরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন
• জাপার সংসদীয় দলের সভায় এরশাদ ছিলেন না
• বৈঠকে সরকারে থাকা না-থাকা নিয়ে হট্টগোল হয়

সরকারের অংশীদার হবে, না বিরোধী দলের ভূমিকা নেবে জাতীয় পার্টি (জাপা)—এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীন দলের নেতারা। জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ চান দল এবার বিরোধী দলের ভূমিকা নেবে। তবে দলের নবনির্বাচিত সাংসদদের বেশির ভাগই সরকারের সঙ্গে থাকতে চান। এ অবস্থায় বিষয়টি মীমাংসার জন্য মহাজোটের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়েছেন দলের নেতারা। তাঁর সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন জাপা নেতারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়ার পর সংসদ ভবনে জাপার সাংসদেরা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। এবার দলটি থেকে ২২ জন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ শপথ নিতে পারেননি। ফলে সংসদীয় দলের সভায় তিনি ছিলেন না।

সংসদীয় দলের বৈঠকে উপস্থিত থাকা জাপার একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরকারে থাকা না–থাকা নিয়ে হট্টগোল হয়। রওশন এরশাদ বলেন, যাঁরা আগে মন্ত্রী ছিলেন তাঁরা দলের জন্য খুব একটা উপকারে আসেননি। তাই এবার সরকারে না থাকাই ভালো। একপর্যায়ে নবনির্বাচিত সাংসদ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা যদি দলের জন্য কোনো কাজ না করে থাকি তাহলে আমাদের দল থেকে বের করে দেন।’

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের মনোভাবও সরকারের না থাকার পক্ষেই বলে জানান জাপার একটি সূত্র। গতকালের বৈঠকে তিনি বলেছেন, সরকারে যদি থাকতে হয় তাহলে সবাই থাকব, মাত্র কয়েকজন থাকবে না। তাঁর এই বক্তব্যের জবাবে মুজিবুল হক বলেন, ‘দলে আপনার অবদান কী?’

পরে অন্য সাংসদেরা বলেন, মহাজোটের অংশীদার হিসেবে সরকারে থাকতে চান তাঁরা। নির্বাচনের সময় এলাকায় জনগণের কাছে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাওয়া হয়েছে। মহাজোটে থাকলে সরকারের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা যাবে।

জাপার একটি সূত্র জানায়, বৈঠকের শেষ দিকে রওশন এরশাদ বলেন, অধিকাংশ সংসদ সদস্য সরকারে থাকতে চান। তাই জাপা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারে থাকার। বাকিটা প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

বৈঠক শেষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাপার কো–চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘কে বিরোধী দলে হবে, সেটা সরকার দেখবে। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় চেয়েছি আমরা।’

১ জানুয়ারি রাতে এরশাদ ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শিরোনামে সাংবাদিকদের কাছে এক বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানান, তাঁর অবর্তমানে দলের দায়িত্ব নেবেন জি এম কাদের।

সরকারে থাকা না–থাকা নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই জাপার উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে। গত মঙ্গলবার দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সদ্য নির্বাচিত সাংসদদের নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তখন সাংবাদিকদের দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছিলেন, ‘শপথ নেওয়ার পর জাপার পার্লামেন্টারি কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

দশম সংসদে জাপার তিন সাংসদকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এর বাইরে এরশাদকে পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রওশন এরশাদকে করা হয় বিরোধী দলের নেতা।

হুইলচেয়ারে আসতে চাননি এরশাদ
গতকাল সকালে এরশাদ ছাড়া দলের ২১ জন সাংসদ শপথ নেন। তখন সাংবাদিকদের জাপার নেতারা বলেছিলেন, অসুস্থতার কারণে এরশাদ বিকেলে স্পিকারের কক্ষে শপথ নেবেন। কিন্তু বিকেলে জানানো হয়, তিনি শপথ নিচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিন–চার দিনের মধ্যে তাঁর (এরশাদ) শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। তা না হলে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই শপথ নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান।’

জাপা সূত্র জানায়, সংসদ সচিবালয় থেকে গতকাল সকালে এরশাদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, আজ (গতকাল) শপথ নিতে আসতে হলে তাঁকে (এরশাদ) হুইলচেয়ারে আসতে হবে। এটি দল ও দেশবাসীর কাছে নেতিবাচক বার্তা দেবে।

গত ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য এরশাদ সিঙ্গাপুরে যান, ফেরেন ২৬ ডিসেম্বর। এরপর থেকে তিনি বারিধারার বাসভবনে অবস্থান করছেন। অসুস্থতার কারণে নিজের নির্বাচনী এলাকা রংপুর-৩ আসনে ভোট দিতে যাননি তিনি। দেশে ফেরার পর পরদিন বাসায় একবার সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।