ঋণখেলাপি শাহাবুদ্দিনের দাঁত ও বুকের পর কোমরে ব্যথা

শাহাবুদ্দিন আলম
শাহাবুদ্দিন আলম
>
  • ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন জেল থেকে হাসপাতালে
  • দাঁতের ব্যথা নিয়ে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন 
  • বুকের ব্যথা নিয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন 
  • এখন কোমরে বাতের ব্যথা নিয়ে ফিজিক্যাল মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন

দাঁতের ব্যথা নিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন কারাবন্দী ঋণখেলাপি ব্যবসায়ী ও এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলম। তবে ওই দিন দাঁতের ব্যথার বদলে বুকের ব্যথা নিয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন তিনি। এখন আবার কোমরে বাতের ব্যথা নিয়ে একই মেডিকেলের ফিজিক্যাল মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এই ওয়ার্ডের দুটি বেড তাঁর দখলে। চিকিৎসকদের শৌচাগারও ব্যবহার করছেন।

ঋণ জালিয়াতির মামলায় গত ১৭ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানের একটি কফি শপ থেকে শাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। চট্টগ্রামের একটি থানায় ব্যাংক এশিয়ার করা ঋণখেলাপির মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি।

শাহাবুদ্দিন আলম ব্যবসার জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ ঋণসুবিধা নিয়েছেন। তাঁর মোট ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬২২ কোটি ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯ টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখা থেকে তাঁর নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৭০৯ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

রাজধানী থেকে সিআইডি পুলিশ গ্রেপ্তারের পর শাহাবুদ্দিন আলমকে চট্টগ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৪ অক্টোবর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যাংক এশিয়ার মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, শাহাবুদ্দিন আলম দাঁতের ব্যথা নিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আসেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তাঁর রোগের ধরন পাল্টে যায়। তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করছেন বলে জানান। ফলে ওই দিন তাঁকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে শাহাবুদ্দিন আলম অধ্যাপক অনুপম বড়ুয়ার অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর জন্য চিকিৎসা বোর্ড বসানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর হৃৎপিণ্ডে কোনো সমস্যা পাননি বোর্ডের সদস্যরা। এরপর ২৯ ডিসেম্বর তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তখন কোমরের ব্যথা অনুভব করছেন বলে জানালে ৩১ ডিসেম্বর ফিজিক্যাল মেডিসিন ওয়ার্ডে (নম্বর ২ /এ) স্থানান্তর করা হয়। তিনি সেখানে অধ্যাপক শওকত হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে ২৭ ডিসেম্বর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোমরের ব্যথার কথা জানালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ফিজিক্যাল মেডিসিনের ২ /এ নম্বর ওয়ার্ডের ১ ও ২ নম্বর বেড শাহাবুদ্দিন আলমের দখলে। এই ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা মাত্র ১১ টি। ফলে অনেক জটিল রোগী হাসপাতালে এসে বেড না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১ ও ২ নম্বর বেডকে ঘেরাও করে একটি কক্ষের মতো বানানো হয়েছে। একটি বেডে শাহাবুদ্দিন আলম এবং অন্যটিতে তাঁর পাহারাদার (গার্ড) থাকেন। কঠিন নজরদারি থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে ফিজিক্যাল মেডিসিন ওয়ার্ডের অধ্যাপক শওকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কোমরের ব্যথা নিয়ে শাহাবুদ্দিন আলম ভর্তি হয়েছেন। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের দুটি বেড দখলে রাখা এবং চিকিৎসকদের শৌচাগার ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেননি। তবে বেড দখলে রাখা এবং শৌচাগার ব্যবহারের বিষয়ে তিনি কেবল ‘হ্যাঁ’ বলে স্বীকার করে নেন। আরও বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) মো. কামাল হোসেন বলেন, শাহাবুদ্দিন আলম অসুস্থ বোধ করায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দিলে তিনি কারাগারে ফিরে আসবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহাবুদ্দিন আলম ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৯৪০ কোটি ১০ লাখ ৫১ হাজার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩৬ কোটি ১১ লাখ ৪১ হাজার, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৭০১ কোটি ৪৯ লাখ ৩১ হাজার, পূবালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ২৯৭ কোটি ১১ লাখ ৪৮ হাজার, কৃষি ব্যাংকের ষোলশহর শাখা থেকে ১৭৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার, অগ্রণী ব্যাংক করপোরেট শাখা থেকে ৫৪৮ কোটি ৪৪ লাখ, জনতা ব্যাংক শেখ মুজিব রোড করপোরেট শাখা থেকে ১১৮ কোটি ২২ লাখ ৭১ হাজার ও প্রাইম ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৫৫ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ তিনি পরিশোধ করেননি।

শাহাবুদ্দিন আলমের মালিকানাধীন এসএ গ্রুপের অধীনে তেল পরিশোধন, খাদ্যপণ্য, দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্য, পানীয়সহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।