প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গ্রামটি সচল হলো

>
  • পালিয়ে যাওয়া বিএনপি কর্মীদের ফিরিয়ে আনতে হবে
  • গভীর নলকূপগুলো আগের মতোই চলবে: জেলা প্রশাসক
  • গ্রামবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে

অবশেষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাজশাহীর তানোরের সেই গ্রামটি সচল হলো। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কলমা গ্রামের ভেতর দিয়ে আগের মতোই যাত্রীবাহী বাস চলেছে। আতঙ্ক দূর হয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

গতকাল বিকেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সভায় নির্দেশ দেওয়া হয়, যাঁরা ভয়ে পালিয়ে আছেন, তাঁরা গ্রামে ফিরে আসবেন। টেলিভিশনের স্যাটেলাইট সংযোগ ফিরিয়ে দিতে হবে। গভীর নলকূপ আগে যেভাবে চলত, এখন সেভাবেই চলবে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে এলাকাবাসীকে এই নির্দেশনা পালন করতে বলেছেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কলমা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উদ্যোগে আইনশৃঙ্খলা–বিষয়ক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম সভায় সভাপতিত্ব করেন।

ওই গ্রামের ভোটকেন্দ্রে নৌকার চেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে বেশি ভোট পড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ত্রাস সৃষ্টি করেন। গ্রামের ভেতর দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। বিচ্ছিন্ন করে দেন ডিশ লাইনের সংযোগ। এমনকি গভীর নলকূপগুলোও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। বিএনপির নেতা–কর্মীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। এ নিয়ে গত শনিবার প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘গ্রামটির একটাই দোষ, তাই এখন বিচ্ছিন্ন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই দিন সকালেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী এলাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা–কর্মীদের নিয়ে প্রাথমিক বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।

গতকালের সভায় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভায় জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, ‘তুমি তানোর-গোদাগাড়ীর মানুষকে গিয়ে বলো, তারা যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। কেউ আইন হাতে তুলে নিলে তার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, তিনি পত্রিকায় সংবাদটি পড়েছেন, সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছেন, এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। আজ থেকে আগের মতোই বাস এই কলমা গ্রামের ভেতর দিয়ে যাবে। এই গ্রামের টেলিভিশনে আজ থেকেই আগের মতো স্যাটেলাইট সংযোগ দিতে হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, গ্রামের যতগুলো গভীর নলকূপ রয়েছে সেগুলো গত ১০ বছর ধরে যাঁদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তেমনি থাকবে। আর এই গ্রামের বিএনপির লোক যাঁরা ভয়ে গ্রাম ছেড়ে বাইরে রয়েছেন, তাঁদের আজকেই ডেকে আনতে হবে। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এটা তো তাঁদেরই দায়িত্ব। তিনি বলেন, ভোটের আগের দিন যাঁরা আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন, তাঁরা অপরাধী। তাঁরা গ্রেপ্তার হবেন।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, নির্বাচনের আগের হামলার ঘটনাও দুঃখজনক। আবার পরে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটাও অনাকাঙ্ক্ষিত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, শনিবার প্রথম আলোতে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই দিন জেলা প্রশাসক তাঁকে বলেছেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তানোর থানার ওসিকে সঙ্গে করে কলমা গ্রামে এসে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন।

সভায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খাদেমুন্নবী চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, কলমা ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি মাইনুল ইসলাম, কলমা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইমাম উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।