ভারতের দেওবন্দ যাচ্ছে তাবলিগের দুই পক্ষই

টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাবলিগের দুই পক্ষ গত বছরের ১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ফাইল ছবি
টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাবলিগের দুই পক্ষ গত বছরের ১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ফাইল ছবি
>
  • তাবলিগের বর্তমান আমির মাওলানা সাদকে নিয়ে বিতর্ক
  • দেওবন্দ মাদ্রাসার আলেমদের মতামত নেওয়া হবে
  • মতামত নেওয়ার পর ইজতেমার তারিখ ঠিক হবে

তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমা এ মাসে হবে কি না তা নিয়ে এখনো সংশয় কাটেনি। সংগঠনের দুটি পক্ষই চলতি জানুয়ারিতে পৃথকভাবে ইজতেমা পালনের তারিখ ঘোষণা করেছিল। তবে সরকার বলছে, তাবলিগের বর্তমান আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে নিয়ে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সে বিষয়ে ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার আলেমদের মতামতের পর ইজতেমার তারিখ ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

তাবলিগের দুপক্ষের সর্বশেষ অবস্থান এবং ইজতেমা আয়োজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক হয়। এই বৈঠকে তাবলিগের দুই পক্ষের মুরব্বিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এক পক্ষ বলছে, সাদ শরিয়তবিরোধী কাজ করছেন। তিনি যেসব কথা বলেছেন, সেগুলো শরিয়াবিরোধী কি না সেটা যাচাইয়ের জন্য তাবলিগের দুই পক্ষের সমন্বয়ে একটি দল দেওবন্দে পাঠানো হবে। তারা ফিরে আসার পর সিদ্ধান্ত হবে।

তাহলে জানুয়ারিতে ইজতেমা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জানুয়ারিতে ইজতেমা বোধ হয় হচ্ছে না। এটা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। ভারত থেকে দলটি আগেভাগে ফিরে এলে জানুয়ারির শেষের দিকে হতে পারে। তা না হলে হয়তো ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে।’

তাবলিগে দেওবন্দের গুরুত্বের বিষয়ে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের মুয়াজ্জিন মাওলানা আমানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এ দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা দেওবন্দের সিলেবাস অনুযায়ী হয়। দেওবন্দ এই উপমহাদেশের এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফতোয়ার ক্ষেত্রেও তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেন এ দেশের সিংহভাগ আলেম।

ধর্ম নিয়ে সাদ কান্ধলভীর কিছু বক্তব্যের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বাংলাদেশে তাবলিগের একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কওমি মাদ্রাসার আলেমদের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের সমর্থকেরা সাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর সাদের পক্ষে আছে তাবলিগ জামাতের নিয়মিত নেতাদের একটি অংশ। এই বিভেদ প্রকাশ্য হয় গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা থেকে। বাংলাদেশে এসেও তখন ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি সাদ।

গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেওয়া সাদ কান্ধলভীর অনুসারী আশরাফ আলী প্রথম আলোকে বলেন, মাওলানা সাদের বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থান জানতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ছয়জনের দল ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় যাবে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তাবলিগ জামাতের সাদবিরোধী শুরা সদস্য মাওলানা মো. জুবায়ের, সাদপন্থী শুরা সদস্য মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম, শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী মাসউদ, গুলশান আজাদ মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সেতুসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, দেওবন্দ যাওয়া প্রতিনিধিদলের সদস্যসংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এদিকে ইজতেমার তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দুই পক্ষেরই সব ধরনের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান, সাদবিরোধী হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, পরবর্তী সিদ্ধান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ মসজিদের বাইরে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।

টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাবলিগের দুই পক্ষ গত বছরের ১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই দিন ময়দানেই সাদের অনুসারী এক মুসল্লি নিহত হন। সংঘর্ষের পর থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজন মুসল্লি (সাদের অনুসারী) প্রায় এক মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ জানুয়ারি মারা যান। সংঘর্ষের আগেই সাদের অনুসারীরা চলতি জানুয়ারি মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। আর সাদবিরোধীরা গত বছরের ইজতেমার পরই চলতি মাসের ১৮, ১৯, ২০ এবং ২৫, ২৬, ২৭-এই দুই পর্বে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেছিলেন।