চাঁদা না পেলে দোকানে তালা

চাঁদা না দেওয়ায় সমবায় মার্কেটের পাশের দোকানগুলোতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার গুলিস্তানে।  ছবি: প্রথম আলো
চাঁদা না দেওয়ায় সমবায় মার্কেটের পাশের দোকানগুলোতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার গুলিস্তানে। ছবি: প্রথম আলো
>
  • সমবায় মার্কেটের পাশে ২০টি দোকানে এখনো তালা
  • ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তালা দিয়েছিলেন
  • যারা চাঁদা দিচ্ছেন তাঁরাই দোকান খুলছেন
  • আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দোকানগুলো অবৈধ

রাজধানীর গুলিস্তানের টুইন টাওয়ার সমবায় মার্কেটের পাশে প্রায় ২০টি দোকানে এখনো তালা ঝুলছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রায় ৪০টি দোকানে তালা দিয়েছিলেন। এখন যাঁরা চাঁদা দিচ্ছেন, শুধু তাঁরাই দোকান খুলতে পারছেন। বাকিরা নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই দোকানগুলো অবৈধ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রাস্তা তথা পার্কিংয়ের জায়গায় এসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকান উচ্ছেদ করে পার্কিংয়ের জায়গা করতে হবে। অন্যথায় এসব দোকানের ভাড়া দলের নেতা-কর্মীদেরই দিতে হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ৯ জানুয়ারি রাতে ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি মো. দুলাল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. রাহাদের নেতৃত্বে প্রায় ৪০টি দোকানে তালা লাগানো হয়। তখন তাঁরা দোকানের আয়তন অনুযায়ী ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন পরিমাণে চাঁদা দিয়ে প্রায় ২০টি দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদা দিতে না পারায় বাকি দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে।

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রফিকুল ইসলাম ও মো. দুলাল। রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯০ সালের আগে থেকে অবৈধ এই দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে খাচ্ছে একটি পক্ষ। তারা দলের (আওয়ামী লীগ) রাজনীতি করে না। অথচ দলের নেতা-কর্মীরা না খেয়ে আছেন। তাই তাঁরা দোকানগুলোতে তালা দিয়েছেন। এখন থেকে তাঁরাই প্রতি মাসে ভাড়া তুলবেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে সাতজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে এই জায়গাটি ফাঁকা ছিল। তখন যে যাঁর মতো করে দোকান বসিয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থক নেতা-কর্মীদেরও কিছু দোকান আছে। এখন এই দোকানগুলো অবৈধ অজুহাতে চাঁদা চাইছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের ভয়ে বিএনপি সমর্থক অনেক দোকানমালিকই গুলিস্তানে আসছেন না। ডিএসসিসি দোকানগুলো উচ্ছেদ করলে কারও আপত্তি থাকবে না।

তবে জায়গার মালিকানার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিএসসিসির একজন সার্ভেয়ার বলেন, জায়গাটি সিটি করপোরেশনের। আর ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার সমবায় মার্কেটের আশপাশে তাঁদের জায়গা নেই বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে সমবায় মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জালাল বলেছেন, মার্কেটের বাইরে তথা এই দোকানগুলো ডিএসসিসির রাস্তার ওপরই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত রাতে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। ডিএসসিসির জায়গা হলে উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

গতকাল গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায়, টুইন টাওয়ার সমবায় মার্কেটের চারপাশের রাস্তার ওপর রয়েছে এই দোকানগুলো। এর মধ্যে পশ্চিম পাশে এক সারিতে দোকান রয়েছে সাতটি। উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দুটি দোকান খোলা। পূর্ব পাশে এক সারিতে ১৮টি দোকানে রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ টিতেই তালা লাগানো। এ মার্কেটের সামনের ছয়টি দোকানের মধ্যে পাঁচটি খোলা। চাঁদা না দেওয়ায় একটি দোকানে তালা ঝুলছে। এ ছাড়া উত্তর পাশে আরও পাঁচটি দোকানে তালা দেখা গেছে।

গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ নেতাদের ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে দোকান খুলেছেন এক দোকানি। তিনি বলেন, ‘চাঁদা না দিয়ে বাঁচতে অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন থেকে তাঁরাই ভাড়া নেবেন বলে জানিয়েছেন। এই অবস্থায় গুলিস্তানে ব্যবসা করাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জানতে চাইলে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দোকানগুলোতে তালা মারার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। দোকানিরা তাঁর কাছে অভিযোগও করেননি।

তবে গতকাল বিকেলে চাঁদাবাজির প্রতিকার চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন দোকানমালিকেরা। পরে ডিএমপি কমিশনার পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেনকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অভিযোগের কপি হাতে পাননি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।