ডিএসসিসির সাবেক প্রশাসকসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এলাকার বলধা গার্ডেন সংলগ্ন প্রায় দুই হাজার বর্গফুট রাস্তা মিথ্যা তথ্য দিয়ে লিজ দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ডিএসসিসির ওই সময়ের প্রশাসক ও অতিরিক্ত সচিব খলিলুর রহমানসহ ৪৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগ থানায় আজ মঙ্গলবার এ মামলা করা হয়। দুদকের উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিএসসিসিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৪৩ জনের পক্ষে একটি আবেদন জমা হয়। আবেদনে বলা হয়, টিকাটুলির বলধা গার্ডেনের পশ্চিম পার্শ্বের সীমানা সংলগ্ন ডিএসসিসির মালিকানাধীন জায়গা দীর্ঘদিন খালি, পরিত্যক্ত ও নোংরা অবস্থায় আছে। ওই জায়গায় জনৈক ব্যক্তি গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ করে ব্যবসা করছে এবং কিছু অংশ আগাছা ও বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ রয়েছে। করপোরেশনের আয়ের স্বার্থে বর্ণিত জায়গা তাঁদের অনুকূলে লিজ দেওয়ার অনুমোদন চাওয়া হয়। আবেদনকারীরা জানায়, সেখানে নিজেদের খরচে দোকান নির্মাণ করা হবে।

মামলা এজাহারে বলা হয়েছে, বাস্তবে ওই জায়গা ডিএসসিসির নামে রাস্তা হিসেবে রেকর্ড করা জমি—যা কোনোভাবেই লিজ দেওয়ার যোগ্য নয়। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যাবে না জেনেই ওই জমির শ্রেণি, দাগ, খতিয়ান ও মৌজা কিছুই উল্লেখ না করে শুধু জায়গার অবস্থান উল্লেখ করে আবেদন করেন আসামিরা। আবেদনপত্র গ্রহণ করে প্রশাসক খলিলুর রহমান বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদনসহ উপস্থাপনের জন্য প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পর্যায়ক্রমে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বিলাল হোসেন ও কানুনগো মোহাম্মদ আলীর টেবিল হয়ে সার্ভেয়ার মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন ও মুহাম্মদ বাচ্চু মিয়ার কাছে ওই নথি পৌঁছায়। দুই সার্ভেয়ারই তাঁদের প্রতিবেদনে আবেদনকারীদের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করে কানুনগো মোহাম্মদ আলীর কাছে নথি উপস্থাপন করেন। মোহাম্মদ আলী আবেদন মোতাবেক বরাদ্দের পক্ষে প্রস্তাব করে সম্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর নথি উপস্থাপন করেন। কানুনগো নিজেও জমির দাগ, খতিয়ান, মৌজা ও প্রকৃতি জানতে চাননি কিংবা নোটে উল্লেখ করেননি। সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ দিদারুল আলম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিলাল হোসেন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান উল ইসলাম চৌধুরী তাতে একমত পোষণ করে স্বাক্ষর শেষে নথি প্রশাসকের কাছে উপস্থাপন করেন। প্রশাসক খলিলুর রহমান প্রস্তাব অনুমোদন করলে আবেদনকারীদের অনুকূলে বরাদ্দপত্র জারি করা হয় এবং দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আগাছা ও বন-জঙ্গল পরিষ্কার ও অবৈধ গাড়ির ওয়ার্কশপ উচ্ছেদের জন্য কোনো প্রস্তাব না করে এবং জমির রেকর্ড সংক্রান্ত কোনো তথ্য নোটশীটে উত্থাপন না করে আবেদনকারীদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার সরাসরি প্রস্তাব আইনানুগ ছিল না। দখল বুঝে নিয়ে বরাদ্দ গ্রহীতারা ওই স্থানে আধা পাকা দোকান নির্মাণ করে অন্যদের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করেন।

খলিলুর রহমান ছাড়া মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন—দুই সার্ভেয়ার (সাময়িক বরখাস্ত) মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন ও মুহাম্মদ বাচ্চু মিয়া, কানুনগো (সাময়িক বরখাস্ত) মোহাম্মদ আলী, সাবেক সম্পত্তি কর্মকর্তা (বর্তমানে-উপসচিব ও উপপ্রকল্প পরিচালক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউরেশন সেন্টার প্রকল্প) মোহাম্মদ দিদারুল আলম।

অন্যদিকে লিজ গ্রহীতাদের মধ্যে ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন—তাসাব্বির হোসেন, শহিদুল হাসান (সাগর), গিয়াস উদ্দিন, সারোয়ার হাসান (আলো), এ এস এম এ কাদের, ফাহমিদা আক্তার কুমকুম, সুরাইয়া আক্তার, ফারিয়া আক্তার নিশা, ফরহাদ হোসেন, নজরুল ইসলাম (বিপ্লব), মফিজুর রহমান পাবেল, ফারুক হোসেন, মানিক মানবিক, আব্দুল আজিজ, প্রাণতোষ চন্দ্র সরকার, মোহাম্মদ হাবিবুল হক, এহেসান উদ্দিন সাহিন, হাফিজ উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম, রফিকুল বারী চৌধুরী, এনামুল হক, আ. হাদি, আবুল হোসেন, ইকবাল হাওলাদার, মনিরুজ্জামান, আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী, রশিদুল হক ভূঁইয়া, আকলিমা মালেক নিপা, ইলিয়াস হোসেন, নজরুল ইসলাম, নার্গিস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, আবিদ রশিদ, এম আনোয়ার পারভেজ, মো. আরমান, জামিল আহমেদ চিশতী, সালেহ মোহাম্মদ কবির, বাতেনুর হক বাঁধন, মো. রানা, সুনিল চন্দ্র পাল, মোকলেসুর রহমান, নুরজাহান বেগম ও এহসানুল আলম।